মুর্শিদাবাদে ‘বন্যা-পূর্ববর্তী’ পরিস্থিতি, নিকাশি সংকটে একদিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন শিসাতলা, ৬০ পরিবার চরম দুর্ভোগে

দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে টানা বৃষ্টি এবং বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এর মধ্যেই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-১ নম্বর ব্লকের দফরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিসাতলা গ্রাম একদিনের মুসলধারে বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, যা কার্যত ‘বন্যা-পূর্ববর্তী’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গ্রামের প্রায় ৬০টি পরিবার এক হাঁটু জলে বন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

নিকাশি নালার সমস্যায় ৬০ পরিবারের জীবন দুর্বিষহ:

গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়ির উঠোন, এমনকি ঘরের মেঝে পর্যন্ত জলে থৈ থৈ করছে। পানীয় জলের কলগুলোও ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ জলের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু কাঁচা এবং কংক্রিটের বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বাসিন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিকাশি নালার বেহাল দশা। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

জীবনযাত্রায় প্রভাব ও নতুন আতঙ্ক:

ঘরের মেঝেতে জল উঠে আসায় রান্নাবান্না, থাকা-খাওয়া, এবং ঘুমানো – সবকিছুর জন্যই পরিবারের সদস্যদের তক্তপোশ বা কাঠের মাচার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই জলমগ্ন পরিবেশে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে, এবং তার চেয়েও বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে বিষধর সাপের আনাগোনা। মানুষের মধ্যে এই নতুন আতঙ্ক তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। গ্রামের শিশুরা অবশ্য এই পরিস্থিতিতে মাছ ধরার জাল নিয়ে জলে নেমে পড়েছে, যা এক দুঃখজনক চিত্রের জন্ম দিয়েছে – বন্যা না আসতেই বন্যার এক প্রতিচ্ছবি।

গ্রামবাসীর ক্ষোভ ও পঞ্চায়েতের আশ্বাস:

গ্রামের বাসিন্দারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “এই গ্রামে শতাধিক পরিবারের বসবাস। কিন্তু হঠাৎই একদিনের মুসলধারে বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েতকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ফলে বন্যার আগেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গ্রামে।” তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের এই নিকাশি সমস্যা সমাধানের জন্য পঞ্চায়েত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

তবে, পঞ্চায়েতের সদস্য কাশেম সেখ এই বিষয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি জানান, “এলাকায় নিকাশি নালার সমস্যার জেরেই এই জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।”

প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং নিকাশি ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান না হলে, সামান্য বৃষ্টিতেই শিসাতলা গ্রামের এই দুর্ভোগের চিত্র হয়তো একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হবে। মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।