বাংলার শিক্ষা ও নিরাপত্তা উভয়ই হাইকোর্টের নজরদারিতে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজ্যের অবস্থান তলব, অন্যদিকে পাক নাগরিকের পাসপোর্ট জালিয়াতি র্যাকেট ফাঁস

রাজ্যের দুটি ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সক্রিয় হস্তক্ষেপ সামনে এসেছে। একদিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে চেয়েছে আদালত। অন্যদিকে, পাসপোর্ট জালিয়াতির এক চাঞ্চল্যকর মামলায় এক পাক নাগরিকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অনুপ্রবেশ ও সম্ভাব্য জঙ্গি যোগের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত মিলেছে, যা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)।
শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র ও শুচিতা: হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অনিশ্চয়তা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে স্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে রাজ্য সরকার কী ভাবছে, তা জানাতে হবে।
এই প্রসঙ্গে বিচারপতিরা তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। আদালত বলেছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত এবং সেখানে শিক্ষাবিদদের প্রাধান্য থাকা উচিত। এটি শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রকৃত শিক্ষার প্রসারে আদালতের গভীর চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। এই নির্দেশ রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্র এবং ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাসপোর্ট জালিয়াতি: আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আভাস
অন্যদিকে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক বড় খবর সামনে এসেছে। পাসপোর্ট জালিয়াতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া পাক নাগরিক আজাদ মল্লিকের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়েছে বলে দাবি করেছে। ED সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় এজেন্সির নজরে এসেছে বাংলাদেশের ২৮টি মোবাইল নম্বর, যেগুলিতে আজাদ মল্লিকের একাধিকবার ফোনালাপের প্রমাণ মিলেছে।
ED আশঙ্কা করছে যে, আজাদ মল্লিক ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করানোর জন্য বাংলাদেশে একটি বড়সড় র্যাকেট চালাত। এই ২৮টি মোবাইল নম্বরের তালিকা ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। ED জানতে চায়, এই নম্বরগুলি কাদের, এবং শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশই এর উদ্দেশ্য ছিল, নাকি জঙ্গি ঢোকানোর মতো আরও গুরুতর উদ্দেশ্যও এর পেছনে কাজ করছিল। এই বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও, ED-র দাবি, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আজাদ মল্লিকের স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা জমা পড়েছিল। এই বিশাল আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও ED খতিয়ে দেখছে। এই অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং সীমান্ত পারের অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যা সম্ভাব্যভাবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি যোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
এই দুটি ঘটনা, যদিও ভিন্ন প্রকৃতির, কিন্তু উভয়ই রাজ্য সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার আবশ্যকতা তুলে ধরেছে। একদিকে শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখা – উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসনকে কড়া নজরদারি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।