ওজন কমানোর অস্ত্রোপচারই কাল হল, মিরাটে রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চরম অবহেলার অভিযোগ, তোলপাড় হাসপাতাল

ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি ঘটল ৫৫ বছর বয়সী এক মহিলার। মিরাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি’-এর পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন, যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসক তা অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার হাসপাতাল চত্বরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়।

বিজ্ঞাপন দেখে সিদ্ধান্ত, পরিণতি মর্মান্তিক:

মৃত রজনী গুপ্তা (৫৫) সদর বাজারের বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী ব্রজমোহন গুপ্তের স্ত্রী। গত ১১ই জুলাই তিনি গড় রোডের নুতিমা হাসপাতালে ওজন কমানোর অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হন। পরিবারের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির একটি বিজ্ঞাপনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রজনীর ছেলে শুভম গুপ্ত জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর মায়ের ওজন ছিল ১২৩ কেজি। ব্যারিয়াট্রিক সার্জন ডাঃ ঋষি সিংহলের পদ্ধতিটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। শুভম আরও জানান, তাঁর বোন শিবানী, যার ওজনও প্রায় ১২০ কেজি, তাঁদের মায়ের সঙ্গেই অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

পরিবারের অভিযোগ: প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও অবহেলা:

পরিবারের অভিযোগ, ডাক্তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ কেজি ওজন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বোন শিবানীর অস্ত্রোপচার সফল হলেও, মায়ের (রজনী) অস্ত্রোপচারের পরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পরিবারের দাবি, অস্ত্রোপচারের পরের দিনই রজনীর পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, যা চিকিৎসকরা প্রথমে অস্বীকার করেন। এরপর ১৩ই জুলাই এক্স-রে করা হলে দেখা যায় যে, অস্ত্রোপচারের সময় পেটে ‘লিকেজ’ বা ছিদ্র হয়েছে, যার ফলে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবার অভিযোগ করেছে যে, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই মঙ্গলবার রজনীর মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের পদক্ষেপ:

রজনীর স্বামী ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন, যেখানে তিনি ডাক্তার এবং হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে চরম অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। তবে, এখনও কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়নি। এসএইচও শিলেশ কুমার পিটিআইকে জানিয়েছেন যে, অভিযোগটি প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করবে। সিএমও ডাঃ অশোক কুমার কাটারিয়া পিটিআইকে জানিয়েছেন যে, তিনি এখনও অভিযোগটি পাননি এবং এটি আসার পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চিকিৎসকের পাল্টা দাবি:

যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসক সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ১১ই জুলাই রজনীর একটি সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এরপর শিবানী ১২ই জুলাই তাঁর অস্ত্রোপচার করার অনুরোধ জানান। ১৩ই জুলাই সকাল পর্যন্ত দু’জনেরই অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। তবে, সেই সন্ধ্যায় রজনী অস্বস্তি অনুভব করেন এবং দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। ডাক্তার আরও দাবি করেন যে, বিশ্বজিৎ বেম্বি, বিশাল সাক্সেনা, অবনীত রানা, মিতুল জৈন, হরিরাজ তোমার এবং সন্দীপ গর্গ-সহ একদল চিকিৎসক তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

এই ঘটনা মিরাটের স্বাস্থ্য মহলে এবং জনমনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ওজন কমানোর অস্ত্রোপচারের নিরাপত্তা এবং চিকিৎসকদের দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তের পরই এই ঘটনার প্রকৃত সত্য সামনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।