বনগাঁয় জনরোষের মুখে বিজেপি বিধায়ক, জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তৃণমূল

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় ফের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া নিজেরই এলাকা বনগাঁ পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলমগ্ন সুভাষপল্লী মাঠপাড়া পরিদর্শনে গিয়ে তীব্র জনরোষের মুখে পড়লেন। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হলো এবং এলাকা পরিদর্শন না করেই খালি হাতে ফিরতে হলো।

দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ

ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার সকালে, যখন বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, যিনি নিজেও এই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা, জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে জেতার পর থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছরে এলাকায় তাঁর দেখা মেলেনি। হঠাৎ করে জল জমা নিয়ে সমস্যা চরমে পৌঁছলে তাঁর আগমনকে ঘিরে স্থানীয়দের মনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। তাদের অভিযোগ, আগামী ভোটকে সামনে রেখেই বিধায়ক এখন ‘ভোট ভিক্ষা’ করতে আসছেন, জনসেবার উদ্দেশ্যে নয়।

তৃণমূল কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ

এই অভিযোগ তুলে বনগাঁ পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর পাপাই রাহা এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ একজোট হয়ে বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়াকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, বিধায়ক ও কাউন্সিলর প্রকাশ্যেই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

তৃণমূল কাউন্সিলর পাপাই রাহা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “ভোটে জেতার পর থেকে নিজের ওয়ার্ডে পাঁচ বছরে আগে কখনও দেখা মেলেনি বিধায়কের। আগামিদিনে ভোট, সেই কারণে আজ ভোট ভিক্ষার জন্য এলাকায় এসেছিল। এলাকার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন যে, বিধায়ক জনগণের কাছে তার অনুপস্থিতির জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য।

বিধায়কের পাল্টা অভিযোগ

অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করতে এসেছিলাম। তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই সমস্ত অভিযোগ করছেন। সাধারণ মানুষ কার সঙ্গে আছে, আগামীতে বুঝিয়ে দেবে।” তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ আনেন।

রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে

এই ঘটনা বনগাঁর স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। একদিকে তৃণমূল সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করে বিধায়ককে কোণঠাসা করতে চাইছে, অন্যদিকে বিজেপি এই ঘটনাকে তৃণমূলের রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে আখ্যা দিচ্ছে। আগামী দিনে বনগাঁর রাজনৈতিক সমীকরণ কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে স্থানীয় মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা কি আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, সেদিকেই এখন নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল।