লখনউ আদালত থেকে রাহুল গান্ধীর সেলফি বিতর্ক, বিচারক নন, আইনজীবীর সঙ্গেই ছবি! সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি

সম্প্রতি লখনউ আদালতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর একটি সেলফি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছবিটি শেয়ার করে কিছু ব্যবহারকারী দাবি করেন, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে চলমান মানহানি মামলার বিচারক নিজেই তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। এই দাবি দ্রুত ভাইরাল হলেও, অনুসন্ধানে এর সত্যতা মেলেনি। বুমলাইভ-এর তদন্তে জানা গেছে, সেলফিতে রাহুল গান্ধীর পাশে থাকা ব্যক্তি আসলে একজন আইনজীবী, মামলার বিচারক নন।

বিভ্রান্তির সূত্রপাত:

১৫ই জুলাই লখনউ আদালতে ভারতীয় সেনার এক কার্যকর্তার বিরুদ্ধে মন্তব্য করার দায়ে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে করা মানহানির মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। এর আগে পাঁচবার শুনানিতে অনুপস্থিত থাকার পর, এদিন তিনি আদালতে উপস্থিত হন এবং ২০,০০০ টাকার দুটি জামিনদার জমা দেওয়ার শর্তে অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট অলোক বর্মা তাঁকে জামিন দেন। এই শুনানির সময় তোলা একটি সেলফিকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়।

এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, “দেখো কেমন মজা রাহুল গান্ধীর নামে এক চাড্ডি লখনৌ আদালতে মামলা দায়ের করে, রাহুল গান্ধী সেই মামলায় হাজিরা দিতে গেলে বিচারক রাহুল গান্ধীর সঙ্গে এই অবস্থায় সেলফি তোলে! মামলাকারীকে ভৎসনা করে এই বলে “আপনি জানেন উনি প্রধানমন্ত্রী হবেন”?” এমনকি বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যও এই ভুয়ো দাবি সহ ছবিটি শেয়ার করেছিলেন, যদিও পরে তিনি তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) পোস্টটি ডিলিট করে দেন। দুঃখজনকভাবে, কংগ্রেসের বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও এই ভুয়ো দাবি প্রচার করে। ছত্তিশগড় যুব কংগ্রেস ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখে, “বিচারকও রাহুল ভাইয়ার ফ্যান…সেলফি তোলা আবশ্যক।”

সত্য উন্মোচন:

বুমলাইভ এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে মাঠে নামে। তারা উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের আইনজীবী ও নেতা প্রদীপ সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রদীপ সিং স্পষ্টভাবে জানান, ছবিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিটি বিচারক নন, বরং একজন আইনজীবী। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সেলফি তোলা ব্যক্তির নাম সৈয়দ মাহমুদ হাসান, তিনি একজন আইনজীবী। অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট অলোক বর্মার উপস্থিতিতে যখন রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলছিল, সেসময় বহু আইনজীবী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।”

কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনেটও অমিত মালব্যের পোস্টের জবাবে এক্স-এ জানান যে, ছবিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একজন আইনজীবীকে দেখা যাচ্ছে, বিচারককে নয়।

আইনজীবীর নিজস্ব বক্তব্য:

বুমলাইভ সেলফিতে থাকা ব্যক্তি, সৈয়দ মাহমুদ হাসানের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। হাসান বর্তমানে লখনউ সিভিল আদালতে অনুশীলন করছেন। তিনি বুমলাইভকে বলেন, “আমি যখন সেদিন আদালতে যাই সেসময় রাহুল গান্ধীর মামলার শুনানি চলছিল। সেলফিটি তখনই তুলে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। কিছু লোক অজ্ঞতার ফলে আমাকে একজন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বলে চিহ্নিত করতে আরম্ভ করেন। আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই আমি কোনো বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নই।”

তিনি আরও স্পষ্ট করেন যে, রাহুল গান্ধীর এই মামলার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগসূত্র নেই। সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, রাহুল গান্ধীর আইনজীবী ছিলেন প্রাংশু আগরওয়াল এবং মামলাকারী বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের প্রাক্তন ডিরেক্টর উদয় শঙ্কর শ্রীবাস্তবের আইনজীবী ছিলেন ভিকি তিওয়ারি।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। একটি সাধারণ সেলফি কিভাবে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, এটি তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।