বিশেষ: হিটলারের নাৎসি বাহিনীর লুকোনো সোনা রয়েছে এই হ্রদেই! জেনেনিন কোথায় সেই ঠিকানা?

অস্ট্রিয়ার ঘন বনানীতে, আল্পসের কোলে ৭৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত টপলিটজ লেক, যা ১.৬১ কিলোমিটার লম্বা এবং ৫০০ থেকে ১৩০০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট, আজও তার গভীরে নাৎসি জার্মানির এক অন্ধকারাচ্ছন্ন রহস্য ধারণ করে আছে। ৩০০ ফুট গভীর এই হ্রদের ৬০ ফুটের নিচে জল এতটাই নোনতা এবং অক্সিজেনহীন যে সেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব। এই অস্বাভাবিক পরিবেশই লেকের তলদেশে পতিত বস্তুকে পচন থেকে রক্ষা করে, যা এটিকে নাৎসিদের গোপন কার্যকলাপের এক নীরব সাক্ষী করে তুলেছে।

নাৎসিদের গোপন ঘাঁটি ও ‘অপারেশন বার্নহার্ড’:
১৯৩৮ সালে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়া দখল করার পর থেকেই লেক টপলিটজ তাদের নজরে আসে। তারা এই লেকের তীরে তাদের নৌবাহিনীর জন্য একটি অত্যন্ত গোপন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে। এখানেই হিটলারের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘অপারেশন বার্নহার্ড’ নামক এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটেনের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণে জাল ব্রিটিশ পাউন্ড ছাপানো। টপলিটজ লেক এই জাল নোট তৈরির এবং সম্ভবত তা লুকানোর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।

যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধার ও ‘সোনা’র গুজব:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, বিজয়ী মিত্রবাহিনী টপলিটজ লেকে লুকিয়ে রাখা নাৎসি সম্পদের সন্ধানে নামে। ১৯৫৯ সালে এক রোমাঞ্চকর অভিযানের পর লেকের গভীর থেকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের জাল ব্রিটিশ নোট উদ্ধার করা হয়। এই বিশাল অঙ্কের জাল নোট উদ্ধারের ঘটনা টপলিটজ লেককে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। এরপর থেকেই জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়ে যে, লেকের তলদেশে শুধু জাল নোটই নয়, প্রচুর পরিমাণে নাৎসিদের লুকিয়ে রাখা সোনাও থাকতে পারে। সেই থেকে ‘লেক টপলিটজে সোনা’ এক অদম্য রহস্য এবং লোভের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্ধকার রহস্যময়তা ও প্রাণের ঝুঁকি:
টপলিটজ লেকের রহস্য আজও সম্পূর্ণরূপে সমাধান হয়নি। এর ঠান্ডা, অক্সিজেনহীন জল যেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই, সেখানেই অসংখ্য অভিযানকারী লেকের তলদেশের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেদের জীবন হারিয়েছেন। লেকের গভীরে কী আরও মূল্যবান সম্পদ বা গোপন নথি লুকিয়ে আছে, তা আজও এক অমীমাংসিত প্রশ্ন।

আজকের টপলিটজ:
বর্তমানে টপলিটজ লেক পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। তবে, লেকের গভীরতম অংশে প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। লেকের এই অবিকৃত রহস্য এবং সময়ের সাথে সাথে নতুন কোনো তথ্য উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই এই স্থানটিকে এক গভীর আকর্ষণ দিয়ে রেখেছে। টপলিটজ লেক শুধু একটি প্রাকৃতিক হ্রদ নয়, এটি নাৎসি জার্মানির এক অন্ধকার ইতিহাসের জীবন্ত দলিল, যা আজও বিশ্বের কাছে এক অমীমাংসিত ধাঁধা হিসেবে রয়ে গেছে।