বাঙালি অস্মিতা’র আড়ালে অনুপ্রবেশকারীকে মদত? শুভেন্দুর তোপে তৃণমূল ও মমতা

‘বাঙালি অস্মিতা’র আড়ালে তৃণমূল কংগ্রেস কি বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি মুসলিম ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছে? এই প্রশ্ন তুলে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে। বুধবার এক্স-বার্তায় (পূর্বে টুইটার) তিনি এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন।
অনুপ্রবেশকারী বিতর্ক: শুভেন্দুর কড়া প্রশ্ন
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স-বার্তায় লিখেছেন, “সারা ভারতে যখন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তখন এই সব অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষাকবচ হয়ে ওঠার চেষ্টায় তৃণমূল নেত্রী।” তিনি একটি ছবি সংযুক্ত করে প্রশ্ন তোলেন, “এই ছবি দেখে কি মনে হচ্ছে যে, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য জড়ো করা হয়েছে, এরা বাঙালি? ভাষা বাদ দিলে, এদের পরিধান, এদের সংস্কৃতি, এদের জীবনযাপনের ধারা দেখে বোঝার উপায় আছে যে এরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজের অভাবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এসে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে, নাকি আপনার অসহযোগিতার কারণে ও জমি না দেওয়ায়, ভারত সরকার সীমান্তে ৫৪০ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া না দিতে পারায়, এরা বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভারতবর্ষে ঘাঁটি গেড়েছে?”
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরাসরি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের অভিযোগ তোলেন এবং সীমান্ত সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের অসহযোগিতাকে দায়ী করেন।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ও ‘বাঙালি অস্মিতা’র দ্বৈত মানদণ্ড
শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “আর, ’বাঙালি অস্মিতা’র যখন এতই চিন্তা মাননীয়া, তাহলে যে হাজার হাজার খাঁটি বাঙালি আজ আপনার দুর্নীতির জন্যে শিক্ষকতার চাকরি হারিয়ে পথে বাংলা ভাষায় আর্তনাদ করছে, তাদের কথা আপনার কানে পৌঁছচ্ছে না কেন? অথচ ভিন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের আর্তি আপনি ঠিক শুনতে পাচ্ছেন।” এর মাধ্যমে তিনি শাসক দলের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে ‘বাটি অস্মিতা’র নীতি নিয়ে দ্বৈত মানদণ্ডের অভিযোগ তোলেন।
যোগ্য বাঙালি অফিসারদের উপেক্ষা: ‘বাইরের’ লোক খোঁজার অভিযোগ
শুভেন্দু এখানেই থামেননি। তিনি রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ পদে যোগ্য বাঙালি অফিসারদের উপেক্ষা করার অভিযোগও তুলেছেন। তিনি বলেন, “আপনার সরকার ও প্রশাসন যখন যোগ্য এবং দক্ষ বাঙালি অফিসারদের থাকা সত্বেও, তাদের উপেক্ষা করে, ‘বাইরের’ লোকদের খোঁজে, যারা শুধুমাত্র আপনাদের কথায় উঠবে বসবে, তখন কোথায় যায় বাঙালি অস্মিতা?”
এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু দুটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ তুলে ধরেন:
কেন শ্রী অত্রি ভট্টাচার্য এবং শ্রী সুব্রত গুপ্ত উপেক্ষিত হলেন এবং শ্রী মনোজ পন্তকে মুখ্য সচিব করা হল? তিনি আবার এই দুই যোগ্য বাঙালি অফিসারের তুলনায় জুনিয়র!
কেন পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে সিনিয়র আইপিএস অফিসার শ্রী সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং ভিন রাজ্য থেকে আসা তাঁর জুনিয়র শ্রীজীব কুমারকে ডিজিপি পদে বসানো হয়েছে?
‘ভোটের রাজনীতি’ ও দুর্নীতির অভিযোগ
শেষে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বার্তায় বলেন, “বাংলার জনগণ জানেন যে মাননীয়া আপনি ভোটের নীতি ছাড়া কিছুই গুরুত্ব দেন না, তাই আপনার বাঙালি অস্মিতা’র নীতি যে স্রেফ আপনার পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা, তা সবাই ভালো করে জানে।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই আক্রমণাত্মক এক্স-বার্তার পর রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এখনও এই মন্তব্যের সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি। তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ‘বাঙালি অস্মিতা’ এবং অনুপ্রবেশের ইস্যু যে রাজনৈতিক তরজাকে আরও বাড়াবে, তা বলাই বাহুল্য।