“নিমিশা প্রিয়াকে ক্ষমা নয়, মৃত্যুদণ্ডই চাই”-দাবি করলেন নিহত ইয়েমেনি নাগরিকের ভাই

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কেরালার নার্স নিমিশা প্রিয়ার ভাগ্য আবারও চরম অনিশ্চয়তার মুখে। ২০১৭ সালে স্থানীয় নাগরিক তালাল মাহদিকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত নিমিশার জীবন বাঁচাতে যখন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, ঠিক তখনই নিহতের পরিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, “আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ নেব না, মৃত্যুদণ্ডই চাই।” এই অনড় অবস্থানে নিমিশার ভবিষ্যৎ আরও ঘোর সঙ্কটের মুখে।

১৪ই জুলাই বিবিসি আরবিকে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে নিহত তালাল মাহদির ভাই আবদেলফাত্তাহ পরিবারের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, “আমাদের পরিবারের অবস্থান পরিষ্কার, শরিয়া আইনের অধীনে কিসাস চাই। ওকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।” তার এই বক্তব্য নিমিশার জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।

আবদেলফাত্তাহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সেই সব দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে, তালাল নাকি নিমিশাকে অত্যাচার করতেন বা তার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, “একজন খুনিকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে। এমন তথ্য বিকৃত করা হচ্ছে যা বাস্তব নয়।” তিনি আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “যে কোনো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দ্বন্দ্বই থাকুক, তা এত নৃশংস খুন, দেহ টুকরো করা এবং লুকিয়ে রাখার সপক্ষে যুক্তি হতে পারে না।”

ইয়েমেনি তদন্তে উঠে আসে, নিমিশা তার পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার জন্য তালালকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। এরপর তালালের মৃত্যু হলে তার দেহ টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখা হয়। এই নৃশংসতার জেরে ইয়েমেনি আদালত নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, এবং তার আপিলও খারিজ হয়ে যায়।

ভারত সরকারের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে বুধবারের (১৬ জুলাই, ২০২৫) নির্ধারিত মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এই স্থগিতাদেশ সাময়িক স্বস্তি দিলেও, নিহতের পরিবারের অনমনীয় অবস্থান নিমিশার মুক্তির পথকে প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ বা অন্য কোনো সমঝোতার প্রস্তাব মানতে রাজি নয়। তাদের একটাই দাবি – শরিয়া আইন অনুযায়ী অপরাধের জন্য নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং ভারত সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা এখন এই অচলাবস্থা কাটাতে কতটা সফল হয়, সেটাই দেখার বিষয়। তবে তালাল মাহদির পরিবারের এই দৃঢ় অবস্থানের পর নিমিশা প্রিয়ার জীবন রক্ষা করা আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল।