ইয়েমেনে ভারতীয় কন্যা নিমিশার ফাঁসি নির্ভর করছে গডস’ল-র উপর, জেনেনিন কী এই আইন?

কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার ১৬ই জুলাই ইয়েমেনে নির্ধারিত ফাঁসির রায় আপাতত স্থগিত করেছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট। তালান আবদো মেহদির হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিমিশার জীবন বাঁচাতে একদিকে যখন ভারত সরকারের কূটনৈতিক ও আইনি প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে, অন্যদিকে, নিহত তালাল আবদো মাহদির পরিবার ‘কিসাস’ আইনের অধীনে চরম প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে অনড়। এই পরিস্থিতিতে, নিমিশার ভাগ্য এখন সম্পূর্ণরূপে তালালের পরিবারের ক্ষমার উপর নির্ভরশীল।
‘কিসাস’ আইন কী? কোরানের নির্দেশিত এক কঠোর বিচার ব্যবস্থা
শরিয়া আইনের অধীনে ‘কিসাস’ এমন একটি ধারণা, যা প্রতিটি অপরাধের জন্য সমান শাস্তির কথা বলে। কোরানে কিসাসের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, হত্যার ক্ষেত্রে সকলের জন্য সমান আইন নির্ধারিত হয়েছে – ‘স্বাধীনতার বিনিময়ে স্বাধীনতা’, ‘দাসত্বের বিনিময়ে দাসত্ব’ এবং ‘নারীর বিনিময়ে নারী’। তবে, এই আইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমও রয়েছে: যদি ভুক্তভোগীর পরিবার অপরাধীকে ক্ষমা করে, তাহলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত এবং ক্ষতিপূরণও দেওয়া উচিত। ইয়েমেনের ইসলামী আইনি কাঠামোতে, কিসাসের এই নীতি ভুক্তভোগীর পরিবারকে প্রতিশোধমূলক ন্যায়বিচার, বিশেষ করে খুনের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড, গ্রহণের অধিকার প্রদান করে। এটি ‘চোখের বদলে চোখ’ – কোরানের এই ধারণারই প্রতিফলন, যা মূল অপরাধের তীব্রতা অনুসারে ন্যায়বিচারকে সমর্থন করে।
স্থগিতাদেশের পর নিমিশার ভবিষ্যৎ:
বর্তমানে, নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এই স্থগিতাদেশ কতদিনের জন্য, তা স্পষ্ট না হলেও, এটি নিমিশার জীবন বাঁচানোর জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে। যদি তালাল আবদো মাহদির পরিবার তাকে ক্ষমা করতে রাজি হয় এবং রক্তমূল্য (দিয়াহ) গ্রহণ করে, তাহলে নিমিশার জীবন রক্ষা পেতে পারে। এই মুহূর্তে কূটনৈতিক চ্যানেলে এবং মানবিক আবেদন নিয়ে নিহত পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চালানোর চেষ্টা চলছে।
কেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল নিমিশাকে?
২০১৭ সালে ইয়েমেনে নিমিশা প্রিয়াকে তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আবদো মাহদির হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ ছিল, অর্থ আত্মসাৎ এবং পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার পর তাঁকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছিল। মামলাটি আদালতে গড়ায় এবং ২০২০ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা পরে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এরপরই নিমিশার ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল ১৬ই জুলাই। তবে, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে আপাতত এই মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হয়েছে।
এখন নিমিশার জীবন সম্পূর্ণভাবে তালাল আবদো মাহদির পরিবারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। এই জটিল আইনি ও মানবিক পরিস্থিতিতে, এক ভারতীয় নার্সের জীবন বাঁচাতে আন্তর্জাতিক স্তরে সমস্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।