অভিজিৎ সরকার হত্যা মামলা, পরেশ পাল-সহ তৃণমূল নেতাদের আপাতত স্বস্তি, হাইকোর্টের রক্ষাকবচ

বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার হত্যা মামলায় আপাতত স্বস্তি পেলেন তৃণমূলের প্রবীণ বিধায়ক পরেশ পাল-সহ শাসক শিবিরের আরও দুই নেতা। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বুধবার নির্দেশ দিয়েছেন যে, আগামী ১ অগস্ট পর্যন্ত নিম্ন আদালতে পরেশ পাল-সহ অন্যদের সশরীরে হাজিরা দিতে হবে না।

এই মামলার আগাম জামিনের আবেদন সংক্রান্ত শুনানি আগামী ১৮ জুলাই শুক্রবার নির্ধারিত রয়েছে। অন্যদিকে, সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত ওইদিনই তাঁদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টের এই নির্দেশের ফলে আগামী ১ অগস্ট পর্যন্ত ওই হাজিরার উপরও স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে।

আদালতে পরেশ পালের আইনজীবীর সওয়াল
পরেশ পালের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান, “২০২১ সালের বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসায় অভিজিৎ সরকারের মৃত্যু হয়। এর আগে প্রথম চার্জশিট পেশ হয়েছিল, সেখানে পরেশ পালের নাম ছিল না। দ্বিতীয় চার্জশিটে পরেশ পালের নাম আসে। তাঁকে আদালত সমন পাঠিয়েছে হাজিরার জন্য। বিধায়ক গ্রেফতারির আশঙ্কা করছেন। তাই আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। আদালত তাঁর আগাম জামিন মঞ্জুর করুন অথবা তাঁকে রক্ষাকবচ দিন। তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন এবং আগামী দিনে বিচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবেন।”

মৃতের পরিবারের আইনজীবীর আপত্তি
অন্যদিকে, মৃত অভিজিৎ সরকারের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী ময়ূখ মুখোপাধ্যায় এই আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “এই আবেদনের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। আদালত সমন পাঠিয়েছে। আদালত যদি তাঁদের হেফাজতে নেয় সেটা কখনওই গ্রেফতারি হতে পারে না। তাই এই আগাম জামিনের আবেদনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানান, আগামী ১৮ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

অভিজিৎ সরকার খুনের ঘটনা ও সিবিআই তদন্তের প্রেক্ষাপট
২০২১ সালের ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বেলেঘাটা এলাকায় বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিজিৎ কলকাতা পুরনিগমের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির বুথ কর্মী ছিলেন। অভিযোগ, তৃণমূলের জয়লাভের পরই বেলেঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পালের ঘনিষ্ঠ দলীয় কর্মীরা অভিজিৎকে বেধড়ক মারধর করেন। হামলার পর অভিজিতের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তাঁর মৃত্যুতে অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের জয়লাভের পরই এলাকার বিধায়ক পরেশ পালের নির্দেশে আমার ভাইকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরেশ পালের অনুগতরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।”

এই ঘটনায় নারকেলডাঙা থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বিজেপি সিবিআই তদন্তের দাবি জানায়। পুলিশি গাফিলতির অভিযোগে হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা হয়। ২০২১ সালের ২৫ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।

এই মামলায় একাধিকবার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন শাসক শিবিরের প্রবীণ নেতা পরেশ। অন্যদিকে, তদন্ত চলাকালীন নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্তরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। সে নিয়ে পুলিশকে জানানো হলেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে পুলিশ নাকি পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর চার মাস পর অভিজিৎ সরকারের দেহ পায় তাঁর পরিবার। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় প্রশাসন।

এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিকেই এখন সবার নজর থাকবে, যা পরেশ পাল-সহ অভিযুক্তদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।