একুশে জুলাই প্রস্তুতি সভায় বেনজির ঘটনা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেরোনো আটকাতে তালা ঝোলাল তৃণমূল

একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে রাখতে অডিটোরিয়ামের গেটে চেন দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সদস্যদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের রবীন্দ্রভবনে এই বেনজির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গেছে। যদিও উদ্যোক্তাদের দাবি, ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা এড়াতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে শাসক দলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি।

রুদ্ধদ্বার প্রস্তুতি সভা: মঞ্চে মন্ত্রী, দর্শকাসনে ক্ষোভ?
এদিন বিকেলে বারাসতের রবীন্দ্রভবনে ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের শিক্ষা সেল। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ সহ আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমান এবং দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায়, দর্শকাসন থেকে একে একে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উঠে বাইরে বেরিয়ে যেতে শুরু করেছেন। ফলে প্রেক্ষাগৃহ প্রায় ফাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়।

এই দৃশ্য নজরে আসতেই তড়িঘড়ি তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সদস্যরা অডিটোরিয়ামের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন বলে অভিযোগ, যাতে কেউ বাইরে বের হতে না পারেন। এই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে সাংবাদিকদেরও বাধার মুখে পড়তে হয়।

খাদ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ও তৃণমূলের সাফাই
সভা মঞ্চে বক্তৃতা করার সময় শিক্ষকদের এই আচরণে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তিনি বলেন, “কী কারণে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১ জুলাই আন্দোলন করেছিলেন তা এখানে অনেকেই জানেন না। যে নেতারা এই কর্মীদের সঙ্গে করে এনেছিলেন, তাঁরা ২ ঘণ্টাও বসতে পারলেন না!” রীতিমতো ক্ষোভ উগরে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “যাঁরা সভায় এসেছিলেন, তাঁরা নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে এসেছিলেন, দলের উন্নতির জন্যে নয়। আমি যখন সভায় এসেছিলাম তখন দর্শকাসন কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এখন আপনারা নিজেরাই তাকিয়ে দেখুন, সেই ভিড় আছে কি না! ব্যাপারটা স্কুল যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ স্কুলে থাকা আর তারপর বাড়ি চলে যাওয়ার মতো। এর থেকে রাস্তার মোড়ে মিটিং করলে অনেক বেশি লোক হয়। এদিকে আপনারা দাবি করছেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ শিক্ষক মিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একুশে জুলাই সার্থক করবেন। আপনারা নিজেরাই জানেন না, কতজন যাবেন। যেতে যেতে কেউ হয়তো ইকোপার্ক বা অন্য কোথাও চলে যাবেন। কর্মীদের দলের প্রতি, আদর্শের প্রতি সহমর্মিতা না থাকলে, রাজনৈতিক সংগঠন দাঁড়ায় না।”

তবে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা অবশ্য মানতে চাননি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল শিক্ষা সেলের আহ্বায়ক দেবব্রত সরকার। তাঁর কথায়, “প্রেক্ষাগৃহে এতটাই ভিড় হয়েছিল যে বাইরে অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তার জেরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাই যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। আর তা এড়াতেই স্বেচ্ছাসেবকরা গেটে তালা দিতে বাধ্য হয়েছেন।”

বিজেপির কটাক্ষ: ডিএ বঞ্চনার ফল?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্য শিক্ষা সেলের কো-কনভেনর দীপঙ্কর সরকার বলেন, “তৃণমূল সরকার শিক্ষকদের ডিএ দেয় না। সেই ক্ষোভ থেকেই তাঁরা প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গে আর থাকতে চাইছেন না রাজ্যের শিক্ষকরা। তাই, তাঁদের তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।”

এই ঘটনা একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এবং শাসক দলের ভিতরের অসন্তোষের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।