বাংলা ভাষা বিতর্কে তুমুল সংঘাত, মমতা-অভিষেকের প্রতিবাদ মিছিল, শুভেন্দুর ‘ভুয়ো হাব’ ও ‘রোহিঙ্গা’ পাল্টা আক্রমণ

ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বলার জন্য বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে গ্রেফতারি ও ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ পাঠানোর হুমকির প্রতিবাদে আজ পথে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতার রাজপথে এই প্রতিবাদ মিছিল থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ানো হয়। তবে এই প্রতিবাদের পাল্টা হিসেবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘বাংলাদেশি ইস্যু’কে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।

মমতা-অভিষেকের প্রতিবাদ: ‘বাঙালিদের হেনস্থা বন্ধ হোক’
বুধবারের মিছিলে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে স্লোগান তোলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ভিন রাজ্যে গিয়ে বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দাগিয়ে গ্রেফতারির ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ পাঠিয়ে দেবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে এই ‘ভাষা বিদ্বেষের’ অভিযোগ তোলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে বাঙালিদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার করেন।

শুভেন্দুর বিস্ফোরক পাল্টা: ‘ভুয়ো কার্ডের হাব বাংলা’, বিএসএফের দিকে আঙুল
তৃণমূলের এই প্রতিবাদের পরই নির্বাচন কমিশনের দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশি ইস্যুকে কেন্দ্র করে মমতাকে একহাত নেন। তাঁর কথায়, “কেন অনুপ্রবেশ তাই নিয়ে বিএসএফের দিকে আঙুল তুলছে ওরা। কিন্তু বারবার বলার পরেও বিএসএফ-কে ৫৪০ কিলোমিটার জমি দেননি কেন? প্রতিবার পার্লামেন্টে এই প্রশ্ন তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তারপরও সরকার জমি দেয়নি। জমি দিন তারপর আঙুল তুলুন। আমরা মানব আপনার যুক্তি।”

শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, “সারা দেশে যত ভুয়ো কার্ড ধরা পড়েছে সব বাংলা থেকে তৈরি। এখানে ভুয়ো কার্ড তৈরির হাব তৈরি হয়েছে।” তিনি একটি পঞ্চায়েতের উদাহরণ টেনে বলেন, “একটা পঞ্চায়েতে শুধু ৩৫০০ জন্মের শংসাপত্র দিয়েছে, ২০০০ টাকা করে নিয়ে। ধরা পড়েছে। আপনারা তালিকা দেখুন। ২০১১ সমীক্ষা অনুযায়ী জাতীয় গ্রোথ যা, তার থেকে আমাদের রাজ্যে ১০ শতাংশ বেশি। বর্ডার অঞ্চলে এই গ্রোথ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা তল্লাশি চাই। বিএলআরও জোর করে ভোটার তালিকা থেকে নাম্বার দিচ্ছে। আমরা নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছি। কিন্তু তারপরও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।”

‘রোহিঙ্গা মুক্ত তালিকা’র দাবিতে অনড় শুভেন্দু
রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুভেন্দু আরও বলেন, “রোহিঙ্গা মুক্ত তালিকা চাই। কমিশনকে সেটাই জানালাম। রোহিঙ্গাদের প্রটেকশন দিতে মমতার আজকের মিছিল। উনার এখন একটাই লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে হবে।” তিনি বিহারের উদাহরণ টেনে বলেন, “বিহারের লাখ লাখ লোক পাওয়া গেছে যারা অনুপ্রবেশকারী। ওখানে যদি ৩০ লক্ষ লোকের নাম্বার যায় তাহলে এখানে ১ কোটি এরকম নাম ঢুকে রয়েছে তালিকায়।” শুভেন্দুর অভিযোগ, “মমতা তার দলের এক এমপি-কে সুপ্রিম কোর্ট পাঠিয়েছিলেন এটা বন্ধ করার জন্য। সুপ্রিম কোর্ট সব বুঝে স্থগিতাদেশ দেয়নি। আমরা রোহিঙ্গা মুক্ত তালিকা করবোই।”

বাংলায় কথা বলাকে কেন্দ্র করে এই রাজনৈতিক সংঘাত এবং অনুপ্রবেশ, ভুয়ো ভোটার তালিকা ও রোহিঙ্গা ইস্যুগুলি আগামী বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়, তা দেখতে রাজনৈতিক মহল উৎসুক।