সারা দেশ থেকে ‘বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর’ কেন্দ্রীয় অভিযানের নামে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের হেনস্থার অভিযোগ তুলে বুধবার কলকাতায় বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল শেষে ধর্মতলার মঞ্চ থেকে তিনি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা নিয়ে ছক কষার অভিযোগ তুলেছেন, যা ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, ভোটার তালিকা যাচাইয়ের নামে বহু বৈধ নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি। তিনি দাবি করেন, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছে, সম্প্রতি বিহারেও একই কাজ করা হচ্ছে, এবং আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি এই একই চক্রান্ত করতে চাইছে।

ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মমতা এদিন বলেন, “শুনেছি, বিহারে ৩০.৫ লক্ষ মানুষকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ভাবে মহারাষ্ট্রে জিতেছে, দিল্লিতে জিতেছে, বিহারেও সেটা করবে, বাংলাতেও সেটা করতে চাইছে। কিন্তু আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চিও জমি আমরা দেব না।”

নির্বাচন কমিশনের একাংশের ভূমিকা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন। তিনি কমিশনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে আমি অসম্মান করছি না। আমি বলব, আপনারা বিজেপির হয়ে কাজ করবেন না। তাহলে আমরা ছেড়ে কথা বলব না।” তিনি কমিশনকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ না করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের কথা মনে করিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ প্রক্রিয়া চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রক্রিয়ায় মোট ৩৫ লক্ষ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা বিহারের মোট ভোটদাতার ৪.৫ শতাংশেরও বেশি। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেই সরব হয়েছিলেন এবং অভিযোগ করেছিলেন যে, এটি আদতে ঘুরপথে এনআরসি করার একটি চক্রান্ত।

এছাড়াও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বলেন, “ইন্দিরা গান্ধীকে গালাগাল করে, এ তো মোর দ্যান ইমার্জেন্সি।” এই মন্তব্য করে তিনি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রমকে জরুরি অবস্থার চেয়েও গুরুতর বলে ইঙ্গিত দেন।

রাজ্যে আর এক বছর পরই বিধানসভা নির্বাচন। খবর অনুযায়ী, রাজ্যে ১লা আগস্ট থেকে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এদিন মঞ্চ থেকে মমতা সাধারণ জনগণের উদ্দেশে বলেন, “ভোটার তালিকার কাজ যখন শুরু হবে, তখন প্রয়োজনে একদিন অফিস কামাই করবেন। আপনার নাম রয়েছে কি না, সেটা যাচাই করে নেবেন।” তিনি নাগরিকদের নিজ নিজ ভোটাধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

বাংলাভাষীদের হেনস্থা এবং ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও বাড়তে চলেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই ইস্যুগুলি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।