“মানুষ জিলিপি খাবে না, তাহলে কী খাবে, বাতাসা?”-ধর্মতলার মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে আক্রমণ মমতার

সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে কেন্দ্রের ‘নাক গলানো’ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। মুখরোচক স্ন্যাকস শিঙাড়া এবং জিলিপি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জারি করা এক নতুন নির্দেশিকা ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বুধবার ধর্মতলার মঞ্চ থেকে এই নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করে সরাসরি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, “মানুষ জিলিপি খাবে না, তাহলে, কী খাবে বাতাসা?”
একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদে বুধবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে এক বিশাল মিছিল শহর পরিক্রমা করে। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত এই মিছিলে মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে ধর্মতলার মঞ্চে বক্তব্য পেশ করার সময়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিঙাড়া-জিলিপি সংক্রান্ত কেন্দ্রের এই নতুন নির্দেশিকার প্রসঙ্গ তোলেন।
মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “তোমরা ঠিক করে দেবে কে কী খাবে? কোথায় থাকবে? কে কী পরবে? কোন ভাষায় কথা বলবে? কে শিঙাড়া খাবে, কে জিলিপি খাবে, তাতে তোমার কী? প্রত্যেকে তাঁর নিজের শরীর বোঝেন। কেউ জিলিপি, পোহা, ধোসা, ইডলি, ঠেকুয়া খাবেন, না কি ছানার রসগোল্লা, হালুয়া খাবেন, এটা তাঁদের ঠিক করতে দাও। তুমি কেন সব ব্যাপারে নাক গলাও। সব ওস্তাদ হয়ে গিয়েছে।”
প্রসঙ্গত, এই বিতর্ক শুরু হয়েছে AIIMS নাগপুর-সহ দেশের সব কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘অয়েল অ্যান্ড সুগার বোর্ড’ পোস্টার লাগানোর নির্দেশ ঘিরে। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনগুলিতে শিঙাড়া, জিলিপিতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ে সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানো হবে, যাতে খাবার খাওয়ার আগে গ্রাহকরা এ বিষয়ে অবগত হন।
বুধবার কেন্দ্রের সেই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন, “অ্যাডভাইসারি ছেড়ে বলছে, ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি। আমি তো শুধু সতর্ক করেছি। যেমন সিগারেটের সময়ে ক্যান্সারের ছবি দেখায়। তেমনি তুমি এখানে বলবে, শিঙাড়া খাবেন না। জিলিপি, সামোসা খাবেন না। তো, বাতাসা খাবে? গ্রামবাংলার মানুষেরা বাতাসা খান। এখন তো নকুলদানাতেও জিএসটি। কিন্তু হিরেতে জিএসটি নেই, কেন বলুন তো! কারণ ওটা ডবল ইঞ্জিনের দেশ।”
তবে শুধু শিঙাড়া-জিলিপি নিয়ে নয়, বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, এদিন তার প্রতিবাদেও সোচ্চার হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রের এই নির্দেশিকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছিলেন, “কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশে এখন থেকে নাকি শিঙাড়া, জিলিপি খাওয়া যাবে না। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো বিজ্ঞপ্তি নয়। আমরা সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা এই বিজ্ঞপ্তি কার্যকরও করব না। আমার মনে হয়, শিঙাড়া এবং জিলিপি অন্য রাজ্যেও জনপ্রিয়। সেইসব রাজ্যের মানুষরাও এই খাবারগুলি ভালোবাসেন। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করা সঠিক কাজ নয়।”
এই নির্দেশিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কড়া অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস বা ব্যক্তিগত জীবনে কেন্দ্রের কোনো হস্তক্ষেপ বাংলার সরকার মেনে নেবে না। এই বিতর্ক আগামী দিনে আরও বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠে কিনা, সেটাই এখন দেখার।