দিল্লি বনাম বাংলা, মমতার হুঙ্কার ‘যা ইচ্ছে তাই নয়’, শমীকের ‘পশ্চিম পাকিস্তান’ হুঁশিয়ারি

একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দিল্লি দখলের’ হুঙ্কার, অন্যদিকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের ‘পশ্চিম পাকিস্তান’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার মন্তব্য – রাজনৈতিক বাগ্যুদ্ধে আজ উত্তাল হয়ে উঠল পশ্চিমবঙ্গের মাটি। রাজ্যে চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং ভিনরাজ্যে বাঙালি হেনস্থার প্রতিবাদ মিছিলে মমতা যেমন বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন, তেমনই শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বাংলাদেশ এবং মৌলবাদের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলকে নিশানা করলেন।
মমতার সুর চড়া: ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ থেকে ‘দিল্লি দখল’
বুধবারের বৃষ্টিভেজা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানান। তাঁর অভিযোগ, “দিল্লির লোকেরা কী ভেবেছেন, যা ইচ্ছে তাই করবেন?” তিনি ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “রাজ্যে রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তা চলছে, এটা শুধু ইমার্জেন্সি নয়, ইমার্জেন্সির থেকেও ভয়ংকর। এটা সুপার ইমার্জেন্সিও নয়, এটা একটা ভয়ানক দুঃশাসনের চেহারা নিচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্যের মাধ্যমে মমতা একদিকে যেমন বাঙালি আবেগ উস্কে দিয়েছেন, তেমনই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিযোগকে আরও জোরালো করেছেন। এরপরই তিনি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ‘ইন্ডিয়া জোটের দিল্লি দখলের’ পথে পা বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “বাংলা দখল করে, এবার দিল্লি দখলের পথে পা বাড়াবে তৃণমূল।”
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের চলমান বন্যা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তৃণমূল কর্মীদের মানবিকতার বার্তা দেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের বহু জায়গায় প্লাবন, সবাই বন্যা কবলিত। বন্যা কবলিতদের পাশে সবাই থাকবেন। রোদে পুড়ে, জলে ভেজা তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যাস আছে। মানুষ বিপদে পড়লে আমরা এসব করি।”
শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা আক্রমণ: ‘পুঁজি পাচার’ থেকে ‘পশ্চিম পাকিস্তান’
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সুরে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। তিনি অভিযোগ করেন, “আজ এ রাজ্য থেকে পুঁজি ভিন্ন রাজ্যে সরে যাচ্ছে।” এরপর তিনি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে শাসক দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন।
শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “একজন সাংবাদিক শ্যামল দত্ত… বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, এখনও পর্যন্ত তিনি জেলে আছেন। মুক্ত হতে পারেননি। যাঁরা এখানে গান কবিতার কথা বলছেন, বাংলা-বাঙালির কথা বলছেন, আমাদের প্রাণের কবি, আমাদের রোম্যান্সের কবি জীবনানন্দ দাশ… সেই জীবনানন্দ দাশের কবিতা বলতে বলতে একজন জেলে চলে গেলেন। ‘আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে…’। বলছিলেন ইসকনের এক সন্ন্যাসী। তিনি এখন জেলে। যিনি তাঁকে খাবার-ওষুধ দিতে যেতেন, তিনিও এখন জেলে।”
তাঁর সংযোজন, “সিটি অফ আলেকজান্দ্রিয়ার সবথেকে বড় লাইব্রেরি যে মৌলবাদীরা ধ্বংস করেছিল, যারা নালন্দা-তক্ষশীলা-বিক্রমশীলাকে ধ্বংস করেছে, বই জ্বালিয়েছে, আজ তারাই আবার একইভাবে ইন্দিরা গান্ধীর লাইব্রেরির ৭০ হাজার বই বাংলাদেশে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই মানসিকতার মানুষ কিন্তু মুর্শিদাবাদে বাড়িতে ঢুকে হিন্দু ছেলে-মেয়েদের উপর আক্রমণ করে তাদের বইতে আগুন ধরাচ্ছে, আজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে বাঙালিকে। নাহলে পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে যাবে।”
এই দুই শীর্ষ নেতার পরস্পরবিরোধী এবং আক্রমণাত্মক মন্তব্য বাংলার রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বন্যা, বাঙালি পরিচিতি, এবং অনুপ্রবেশ – এই সমস্ত ইস্যু আগামী দিনগুলিতে আরও তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।