“স্কুলে রয়েছে একাধিক সমস্যা “-হাল ফেরাতে বিক্ষোভে শিক্ষকরা, জেনেনিন তাদের দাবি কী কী?

সাধারণত স্কুলের বেহাল পরিকাঠামো বা মিড-ডে মিলের নিম্নমান নিয়ে অভিভাবক বা গ্রামবাসীরাই ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ব্লকের রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেল এক অভূতপূর্ব চিত্র। বিদ্যালয়ের শোচনীয় পরিকাঠামো এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের দাবিতে এবার খোদ শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরাই বিক্ষোভে নেমেছেন। স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে ব্যানার হাতে প্রতিবাদে সামিল হন তাঁরা।
শিক্ষকদের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। বিদ্যালয়ে পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, শৌচাগারগুলি নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী, বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত, মিড-ডে মিলের মান অত্যন্ত নিম্নমানের, এবং শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত আলো বা পাখার ব্যবস্থা নেই। এমনকি, স্কুলের একমাত্র মাঠটিও খেলাধুলার অনুপযুক্ত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ৩১ জন শিক্ষকের অধিকাংশই এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। তাঁদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে এই সমস্যাগুলো জানানো হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি, তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।
শিক্ষক মিঠুন দত্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে আড়াই হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী পড়ে। শিক্ষার পরিবেশ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই নিজেদের উদ্যোগে প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হলাম।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। পড়ুয়াদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্যই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। তবে ধর্নায় বসলেও আমরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি। যখন যার ক্লাস থাকে, তিনি ক্লাস নিতে চলে যান।”
শিক্ষকদের এই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে স্কুলের ছাত্র আজার হুসেন। সে জানায়, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে দাবি তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ বাস্তব। একটি বিদ্যালয়ে যা যা থাকা দরকার, তার কিছুই এখানে নেই। যদি এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে আমরা ছাত্রছাত্রীরাও পরে ধর্নায় বসব।”
তবে, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রেজিনা বেগম জিন্নাত শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সহমত নন। তাঁর দাবি, “শিক্ষকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিছু শিক্ষক জোর করে ক্লাস বন্ধ করে এই আন্দোলন করছেন। স্কুল পরিচালন কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা করে বিবেচনা করা হবে।” এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা পরিদর্শক মুরারি মোহন মণ্ডলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাদের দাবি দ্রুত পূরণ না হলে জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। মঙ্গলবার তারা বিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ এবং ছাত্রসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন। রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই ব্যতিক্রমী আন্দোলন নিঃসন্দেহে রাজ্যের অন্যান্য বেহাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্রকেই সামনে নিয়ে এসেছে।