বাংলা ভাষা বিতর্কে উত্তাল রাজনীতি, হিমন্তের মন্তব্যে মমতার পাল্টা আক্রমণ, বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাঙালি বিদ্বেষের’ অভিযোগ

“ফর্মে মাতৃভাষা বাংলা লিখলেই বুঝে যাবেন সে বিদেশি।” অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার এই মন্তব্যে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওড়িশা সহ একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের হেনস্থার অভিযোগের মধ্যেই হিমন্তের এই মন্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। এই ইস্যুতে ‘বিজেপি বাংলা ভাষা এবং বাঙালি বিরোধী’ স্লোগান তুলে প্রতিবাদে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার কলকাতায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলও হয়।
মিছিল শেষে প্রতিবাদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিমন্তের নাম না করে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি বলেন, “তুমি আগে নিজে ক্ষমতায় থাকবে কি না দেখো, অসম সরকার তুমি ১২ লক্ষ মানুষকে বের করেছ তাঁরা অসমীয়া ভাষায় কথা বলতে পারে না তাই। ওড়িশাতে যখন বিদ্যুৎ এর সমস্যা হয় সাইক্লোনের সময় তখন আমাদের ইঞ্জিনিয়ার এ গিয়ে কাজ করে? ওড়িশায় কত বাঙালি পর্যটক যান! জেনে রাখুন ওখানে বাঙালি অত্যাচার হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি হিমন্তের মন্তব্যকে বাঙালি বিরোধী কার্যকলাপের অংশ হিসেবেই দেখছেন।
উল্লেখ্য, হিমন্ত বিশ্বশর্মার এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বের জন্যও অস্বস্তি তৈরি করে। বিতর্কের মুখে পড়ে হিমন্ত বাধ্য হন তাঁর মন্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ দিতে। তিনি বলেন, “অসম কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তৃণমূল যেভাবে আমার মন্তব্য বিকৃত করে আমাকে বাংলা বিরোধী হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে সেটা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আড়াল করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। এই অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি দেশের জনসংখ্যার কাঠামোকে বদলে ফেলতে পারে।” হিমন্তের দাবি, অসমে বসবাসকারী বাংলাভাষী-সহ প্রত্যেক ভারতীয় তাঁর সরকারের অবস্থান বোঝেন এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অসম সরকারের অবস্থানকে সমর্থনও করেন।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস হিমন্তের এই সাফাইকে ‘জুমলা’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, অসমের নতুন এনআরসি তালিকায় কেন ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি? তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষে অসমের একটা বড় ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই হিমন্ত সারবত্তাহীন সাফাই গেয়েছেন। তাদের দাবি, অসমের নতুন এনআরসি তালিকায় ১৯ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু বাঙালি। ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত হিন্দু বাঙালিদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। তাদের মতে, সম্প্রতি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা বিরোধিতায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার ও ‘পুশব্যাক’-এর যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, অসম তাতে এককাঠি এগিয়ে।
এই বিতর্ক অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ভাষা ও জাতিগত বিভেদকে আরও উসকে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হিমন্তের মন্তব্য আগামী দিনে দুই রাজ্যের সম্পর্কে আরও টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে এবং এটি আসন্ন নির্বাচনগুলিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।