স্কুলছাত্রের রহস্যমৃত্যু, হাইকোর্টের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত, সত্য উদঘাটনে নতুন আশার আলো

মালদহের মানিকচকের একটি মিশনারি স্কুলের হোস্টেল থেকে উদ্ধার হওয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শ্রীকান্ত মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ ঘিরে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে পরিবারের তীব্র সন্দেহের পর, এবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মৃতদেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের ফলে সত্য উদঘাটনে নতুন আশার আলো দেখছে মৃত ছাত্রের পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত ২ জুলাই রাতে, যখন মানিকচকের রোজমেরি মিশনারি স্কুলের হোস্টেল থেকে শ্রীকান্ত মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও, ছাত্রের বাবা শুরু থেকেই এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করে আসছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অসঙ্গতি দেখতে পেয়ে, তিনি ন্যায়বিচারের আশায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মৃতদেহ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত এবং অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আবেদন জানান তিনি।
বুধবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে বিচারপতি নির্দেশ দেন যে, মালদহ থেকে মৃতদেহ কল্যাণী এইমস (AIIMS) হাসপাতালে এনে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে হবে। যদিও কল্যাণী এইমস জানিয়েছে, তারা এই ময়নাতদন্তের জন্য অটোপসি সার্জন পাঠাতে পারবে না, তবে মৃতের পরিবারের খরচে মানিকচক থানার তদন্তকারী অফিসার মৃতদেহ কল্যাণীতে নিয়ে আসতে পারবেন।
হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যেই দেহ কল্যাণীতে নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক। ময়নাতদন্তের সময় তদন্তকারী অফিসার বা পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তবে, গোটা ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়াটির ভিডিওগ্রাফি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ, যা ঘটনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
বিচারপতি আরও জানিয়েছেন যে, দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পর যদি প্রথম রিপোর্টের সঙ্গে কোনো পার্থক্য দেখা যায়, তবে তা তদন্তকারী অফিসারকে জানাতে হবে। এছাড়াও, এই মামলার তদন্তভার হস্তান্তর সহ অন্যান্য যে সমস্ত আবেদন রয়েছে, সেগুলি নিয়ে পরিবার ভবিষ্যতে নতুন করে আবেদন করতে পারবে বলেও আদালত জানিয়েছে।
বুধবার শুনানিতে মৃত ছাত্রের পরিবার আদালতকে জানায় যে, মালদহ থেকে কল্যাণী পর্যন্ত দেহ আনার যাবতীয় খরচ তারাই বহন করবে। অন্যদিকে, কল্যাণী এইমস কর্তৃপক্ষ আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে যে, তাদের হাসপাতালে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে কোনো অসুবিধা নেই, কারণ ময়নাতদন্তের জন্য নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এরপরই বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মালদহ থেকে ওই ছাত্রের দেহ কল্যাণী এইমসে এনে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের ফলে শ্রীকান্ত মণ্ডলের মৃত্যুর পেছনের আসল কারণ উদ্ঘাটিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।