মেডিক্যাল কলেজে জাল এসটি শংসাপত্র কাণ্ড, ৪ বছর পর বহিষ্কৃত ছাত্রী, প্রশ্নের মুখে প্রভাবশালীদের ভূমিকা

দীর্ঘ চার বছর ধরে জাল এসটি (ST) শংসাপত্রের জোরে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এক ছাত্রী অবশেষে বহিষ্কৃত হলেন। জুহি কোলে নামে ওই ছাত্রী ২০২২ সালে একটি ভুয়া জাতিগত শংসাপত্র জমা দিয়ে সংরক্ষিত আসনে ভর্তি হয়েছিলেন। এই ঘটনা সামনে আসতেই আদিবাসী সংগঠনগুলির তীব্র প্রতিবাদ এবং স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, ২০২২ সালে NEET উত্তীর্ণ হয়ে জুহি কোলে এসটি সংরক্ষিত আসনে ভর্তি হন। শুরু থেকেই তাঁর পদবী এবং শংসাপত্র নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। যেহেতু শংসাপত্রটি জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ইস্যু হয়েছিল, তাই সেটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জলপাইগুড়ির মহকুমা শাসক এবং অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে পাঠানো হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সম্প্রতি দুই দফতরই নিশ্চিত করে যে, জুহি কোলের জমা দেওয়া শংসাপত্রটি জাল।

এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আদিবাসী সম্প্রদায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাঁদের অভিযোগ, জুহি কোলের মতো একজন প্রতারকের কারণে একজন প্রকৃত আদিবাসী পড়ুয়া ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে আদিবাসীরা বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও করে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং চতুর্থ বর্ষের ওই ছাত্রীকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি জানায়। তাদের চাপেই অবশেষে সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য ভবন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজকে জুহি কোলেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয়। নির্দেশের পরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে বহিষ্কার করে এবং তার বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

এই ঘটনা রাজ্য জুড়ে একাধিক গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। কীভাবে একজন ছাত্রী জাল শংসাপত্র পেলেন? এর পিছনে কি কোনো বৃহৎ জালিয়াত চক্র সক্রিয়? কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির মদত রয়েছে কিনা? কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা? এই সমস্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে আদিবাসী সংগঠনগুলি। এছাড়াও, একটি শংসাপত্র আসল নাকি জাল, তা যাচাই করতে কেন দীর্ঘ চার বছর সময় লাগল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এই দীর্ঘসূত্রতা কি কোনোভাবে ছাত্রীকে বা কোনো প্রভাবশালীকে বাঁচানোর চেষ্টা ছিল – এই অভিযোগও তুলেছেন আদিবাসীরা।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুণ্ডু অবশ্য এই বিষয়ে জানান, “ছাত্রীটি ২০২২ সালের শেষের দিকে ভর্তি হয়েছিল। পরে দেখা যায় যে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিল, সেটা সন্দেহজনক। স্বাস্থ্য ভবনের নজরেই তদন্ত হয়। সোমবার স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ এসে যায়। সেই নির্দেশ আসামাত্র ওই ছাত্রীকে কলেজ থেকে সরানো হয়েছে।”

এই ঘটনায় মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিরোধীরা এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা, প্রশাসন এবং চিকিৎসা – সর্বত্রই গোলমাল চলছে এবং এই ঘটনাই তার প্রমাণ। তাদের অভিযোগ, চার বছর ধরে শংসাপত্র যাচাই না হওয়াটা বিচার ব্যবস্থার প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।