রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করুন, নইলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা! হুঁশিয়ারি NATO-র

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। এবার সরাসরি ভারত, চিন এবং ব্রাজিলের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলিকে চরম হুঁশিয়ারি দিল ন্যাটো। জোটের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং তেল-গ্যাস কেনা জারি রাখলে এই দেশগুলির ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর চাপ সৃষ্টির নির্দেশও দিয়েছে ন্যাটো।
ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেলের সরাসরি বার্তা: ‘১০০ শতাংশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’
ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রিটা এক বিস্ফোরক বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “চিনের প্রেসিডেন্ট হোন বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী, অথবা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে গেলে, তাদের কাছ থেকে তেল, গ্যাস কেনা চালিয়ে গেলে, আপনাদেরও বুঝতে হবে, মস্কোর ওই ব্যক্তি যদি শান্তিপ্রস্তাবে আমল না দেন, আমি কিন্তু ১০০ শতাংশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপাব।”
মার্ক রিটা আরও বলেন, “ওই তিন দেশকে বলব, বিশেষ করে যদি বেজিং অথবা দিল্লিতে থাকেন, বা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হোন যদি, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন। কারণ এতে জোর ধাক্কা লাগতে পারে। তাই বলব, ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করুন। বলুন শান্তিপূর্ণ আলোচনার প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে। অন্যথায় ব্রাজিল, ভারত এবং চিনের উপর কিন্তু ব্যাপক আঘাত নেমে আসবে।”
ট্রাম্পের ঘোষণার পরই ন্যাটোর কড়া পদক্ষেপ: সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাশিয়ার সহযোগী দেশগুলি
ন্যাটোর তরফে বেছে বেছে ভারত, চিন ও ব্রাজিলকে এই সরাসরি হুঁশিয়ারি দেওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ একদিন আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য জোগানোর ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রাশিয়া এবং তাদের সহযোগী দেশগুলির উপর চড়া শুল্ক চাপানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে Patriot Missile System দেওয়ার ঘোষণা করেছেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে রাশিয়ায় হামলা করার প্রসঙ্গও তাঁর মুখে উঠে এসেছে।
ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার রফতানি করা পণ্য যে দেশগুলিতে ঢোকে, যারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অন্যান্য সামগ্রী কেনে, আগামী ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি না হলে, ওই সব দেশের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। ট্রাম্প বলেন, “৫০ দিনের মধ্যে শান্তিচুক্তি না হলে, পরিস্থিতি খারাপ হবে। শুল্কের পাশাপাশি অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাও চাপবে।” আমেরিকার কংগ্রেসের অনুমতি না মিললেও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পথ থেকে সরবেন না বলেও ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আমেরিকার সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ট্রাম্প চাইলে রাশিয়ার সহযোগী দেশগুলির উপর ৫০০ শতাংশ শুল্কও বসাতে পারেন।
ভারতের জন্য উদ্বেগ: জ্বালানি ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কেনে ভারত, চিন এবং তুরস্ক। ট্রাম্প ও ন্যাটোর এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপালে ভারতের মতো দেশগুলির অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তেমনই জ্বালানির জোগানেও গুরুতর ভাঁটা পড়বে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামও আগুন হয়ে যেতে পারে, যা সরাসরি ভারতের মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যদিও রাশিয়ার তরফে এখনও পর্যন্ত যুদ্ধ থামানোর কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। রাশিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী সেরগেই রায়াবকভ জানিয়েছেন, মস্কো ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় রাজি, তবে হুমকি-হুঁশিয়ারিতে কোনো কাজ হবে না। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।