দেশের অ্যাথলেটিক মহলে ‘টার্বান্ড টর্নেডো’ নামে পরিচিত ১১৪ বছর বয়সী ম্যারাথন রানার ফৌজা সিং গত সোমবার এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন। জলন্ধর-পাঠানকোট হাইওয়েতে একটি গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। এই ঘটনায় পাঞ্জাব পুলিশ ৩০ বছর বয়সী প্রবাসী ভারতীয় অমৃতপাল সিং ধিলোঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

‘টার্বান্ড টর্নেডো’র জীবনাবসান:

১৯১১ সালের ১লা এপ্রিল পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণ করা ফৌজা সিং ৮৯ বছর বয়সে প্রথম রেসের ট্র্যাকে নামেন। এরপর ২০০০ সালের লন্ডন ম্যারাথনে দৌড়ানোর পর থেকে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং অসংখ্য ৪২ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিক এবং ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের মশালবাহকও ছিলেন তিনি। এমনকি কয়েক বছর আগে ডেভিড বেকহ্যাম এবং মহম্মদ আলীর মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সাথে একটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছিলেন। ১০২ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক দৌড় থেকে অবসর নিলেও, সমাজকল্যাণমূলক কাজে তাকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সক্রিয় দেখা গেছে। নেশামুক্ত সমাজ গড়তেও তিনি সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েছেন। তাঁর এই অদম্য প্রাণশক্তি ও কর্মোদ্যম তাকে ‘টার্বান্ড টর্নেডো’ উপাধি এনে দিয়েছিল।

দুর্ঘটনা ও অভিযুক্তের খোঁজ:

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে জলন্ধরের দাসুপুরের বাসিন্দা অমৃতপাল সিং ধিলোঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ভোগপুর থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং বুধবার অমৃতপালকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, ফৌজা সিংয়ের দুর্ঘটনার পর ওই সময়ে রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির একটি তালিকা তৈরি করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি ফরচুনার এসইউভি চিহ্নিত করা হয়, যা কাপুরথালার বাসিন্দা ভারিন্দর সিংয়ের নামে রেজিস্টার করা ছিল। ভারিন্দর সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি জানান, তিনি দুই বছর আগে গাড়িটি অমৃতপালকে বিক্রি করেছিলেন। অমৃতপাল কিছুদিন আগেই কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন।

এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর অমৃতপাল গাড়ি নিয়ে আর জলন্ধর শহরে ঢোকেননি। বরং বিভিন্ন গ্রামের ভিতর দিয়ে পালিয়ে নিজের গ্রামে পৌঁছান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর অমৃতপাল এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে আঘাত করার কথা স্বীকার করেছেন, তবে তখন তিনি জানতেন না যে তিনি ফৌজা সিংকে আঘাত করেছেন।

ফৌজা সিংয়ের এই আকস্মিক প্রয়াণ দেশের অ্যাথলেটিক এবং সামাজিক মহলে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। তাঁর দীর্ঘ জীবন এবং অদম্য স্পৃহা চিরকাল মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।