আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় নয়া মোড়! অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের খালাসের আবেদন গ্রহণ হাইকোর্টের

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় (R G Kar Case) যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়য়ের বেকসুর খালাসের আবেদন গ্রহণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই সিদ্ধান্তে বহু আলোচিত এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল এই মামলায় নতুন করে আইনি লড়াই শুরু হতে চলেছে, যা রাজ্যজুড়ে আবারও আলোচনা তৈরি করেছে।

একসঙ্গে শুনানি হবে সিবিআই ও সঞ্জয় রায়ের আবেদনের
হাইকোর্ট জানিয়েছে, সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলার (সম্ভবত ফাঁসির আর্জি সংক্রান্ত) সঙ্গে একত্রে সঞ্জয় রায়য়ের করা আবেদনেরও শুনানি হবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এই যুগপত শুনানি নিঃসন্দেহে মামলার জটিলতা এবং গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন: খালাসের দাবিতে আইনজীবীর সওয়াল
আজ, ১৬ জুলাই হাইকোর্টে শুনানিকালে সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী জোরালো সওয়াল করেন। তিনি দাবি করেন, এই মামলায় সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, বিচার প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটি রয়েছে এবং নিম্ন আদালতের রায়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে।

আইনজীবীর যুক্তি, মামলার চার্জশিটে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ফরেনসিক প্রমাণ, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং ডিজিটাল প্রমাণ যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। তাই, বেকসুর খালাস পাওয়ার জন্য এটি একটি উপযুক্ত মামলা বলেই মনে করছেন তাঁরা।

আরজি কর কাণ্ড: দেশজুড়ে ক্ষোভের ঝড় ও শিয়ালদহ আদালতের রায়
প্রসঙ্গত, গত বছর কলকাতার অন্যতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসককে নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সামনে আসে। এই ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। নারী নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনমত তৈরি হয় এবং বহু মানুষ সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শিয়ালদহ আদালত এই মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। সিবিআইও আদালতে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে জোর সওয়াল করেছিল। তবে বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন যে, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় হলেও এটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়, যা ফাঁসির জন্য অপরিহার্য মানদণ্ড। সেই যুক্তিতে আদালত যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে।

উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ: পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
যেদিন শিয়ালদহ আদালতে রায় ঘোষিত হয়, সেদিনই সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁরা এই রায় হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করবেন। সেইমতো গত ১৭ জুন কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জমা দেন তাঁরা। অবশেষে আজ ১৬ জুলাই সেই আবেদন গ্রহণ করায় মামলার মোড় ঘোরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হাইকোর্ট কীভাবে এই মামলার পুনর্বিচার করে এবং নতুন করে প্রমাণ ও যুক্তিগুলি খতিয়ে দেখে। যদি হাইকোর্ট সঞ্জয়ের আইনজীবীদের দাবিগুলিকে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যথার্থ বলে মনে করে, তাহলে সাজা কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বা খালাসের দিকেও এগোতে পারে মামলাটি। অন্যদিকে, সিবিআইও তাদের আইনি দলকে সক্রিয় করেছে এবং উচ্চ আদালতে তাদের সওয়ালকে আরও জোরদার করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই হাই-প্রোফাইল মামলার পরবর্তী শুনানি সেপ্টেম্বর মাসে। সেদিকেই এখন সবার নজর।