“ভারতের মহাকাশ গবেষণার যাত্রা কঠিন হতে পারে, তবে …?”-মহাকাশ থেকে ফিরে যা বললেন শুভাংশু

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার পা রেখে ইতিহাস গড়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে এলেন ভারতীয় নভোচর শুভাংশু শুক্লা। ‘এক্সিয়ম-৪’ মিশনের অংশ হিসেবে আরও তিন সহ-মহাকাশচারীকে নিয়ে সোমবার তিনি ISS থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো উপকূলে সফলভাবে অবতরণ করেন। ভারতীয় সময় দুপুর ৩টা ১ মিনিটে স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলটি প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে আসে। এই মুহূর্তটি ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জন্য এক অসাধারণ গর্বের।
অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের বিস্তারিত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাবেক নভোচারী পেগি হুইটসনের নেতৃত্বে এবং ভারতের গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার পরিচালনায় ‘এক্সিয়ম-৪’ মিশনটি ২৬ জুন আইএসএসে পৌঁছেছিল। এই মিশনের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন পোল্যান্ডের স্লাওসজ উজনানস্কি-উইসনিয়েস্কি এবং হাঙ্গেরির তিবোর কাপু।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্লা হলেন মহাকাশে যাওয়া দ্বিতীয় ভারতীয়। ১৯৮৪ সালের পর এবারই প্রথম কোনো ভারতীয় আবার মহাকাশে গেলেন, যা ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এর আগে, ১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে রুশ সয়ুজ মহাকাশযানে করে মহাকাশে গিয়েছিলেন নভোচারী রাকেশ শর্মা।
‘এক্সিয়ম-৪’ মিশনটি একটি বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা, যা যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনভিত্তিক ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি ‘এক্সিয়ম স্পেস’ পরিচালনা করছে। এই যৌথ উদ্যোগে নাসা, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’, ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইএসএ’ এবং ইলন মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ অংশ নিয়েছে।
আইএসএস থেকে বিদায় ও শুভাংশুর অনুপ্রেরণামূলক বার্তা
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ আইএসএস জানিয়েছে, ‘এক্সিয়ম-৪’ মিশনের ক্রু সদস্যরা মহাকাশযানে তাদের আসন গ্রহণ করেছেন এবং যানটির হ্যাচ বা দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহাকাশযানটির আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মুহূর্তটিও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে।
রোববার আইএসএস থেকে বিদায় বক্তব্যে ভারতীয় নভোচারী শুক্লা এক অনুপ্রেরণামূলক বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ভারতের মহাকাশ গবেষণার যাত্রা কঠিন হতে পারে, তবে সেই যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এ ছিল এক অসাধারণ যাত্রা। এখন এই অধ্যায়ের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছলেও আপনি আর আমি, আমাদের পথ এখনও অনেক দূর বাকি রয়ে গিয়েছে। আমাদের মানব মহাকাশ মিশনের যাত্রা অনেক দীর্ঘ ও কঠিন। তবে আমাদের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হলে তারারও নাগাল পাব আমরা।”
শুভাংশু শুক্লার এই সফল অভিযান ভারতের মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে এবং দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।