ফাস্ট ফুড কারখানায় মর্মান্তিক পরিণতি, কিমা মেশিনে পিষ্ট হয়ে ১৯ বছরের তরুণের মৃত্যু, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

ফাস্ট ফুড কারখানায় সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নির্মম মৃত্যুর শিকার হলেন মাত্র ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ভারনন এলাকার Tina’s Burritos Food Processing Plant-এ কিমা তৈরির মেশিন পরিষ্কার করতে গিয়েছিলেন তিনি। আর তখনই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মেশিনের ভিতরে টেনে নিয়ে পিষে ফেলা হয় তাকে। এই ভয়াবহ ঘটনা কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
রাতের শিফ্টে ভয়াবহ দুর্ঘটনা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণ Tina’s Burritos Food Processing Plant-এ সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সারাদিনের কাজ শেষ হওয়ার পর রাতে কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করার কাজ চলত। সেই মতো, ওই তরুণ মাংস কিমা তৈরির একটি মেশিন পরিষ্কার করতে যান। ভারননের সার্জেন্ট ড্যানিয়েল ওনোপা জানিয়েছেন, রাত ৯:৩০টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, মেশিন বন্ধ করেই অন্যান্য কর্মীরা কাজ শেষ করে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনোভাবে কিমা তৈরির মেশিনটি চালু হয়ে যায়। যখন তরুণটি মেশিন পরিষ্কার করতে যান, তখন হঠাৎ চালু হওয়া মেশিনটি তাকে নিজের ভিতরে টেনে নেয়।
সহকর্মীদের সামনেই মর্মান্তিক পরিণতি
ঘটনার সময় কারখানায় আরও কয়েকজন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, তরুণটি চিৎকার করে ওঠেন, আর তাতেই বিষয়টি সকলের চোখে পড়ে। দ্রুত তারা মেশিন বন্ধ করতে ছোটেন। কিন্তু মেশিন বন্ধ হতে হতে তরুণটি চোখের সামনেই পিষ্ট হয়ে যান। পুলিশ এসে মেশিনের ভিতর থেকে তার পিষে যাওয়া দেহ উদ্ধার করে।
আচমকা কীভাবে বন্ধ থাকা মেশিনটি চালু হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া ডিভিশন অফ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ এবং ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নিজ অফিস যৌথভাবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব: পরপর দুর্ঘটনা
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আমেরিকায় এমন আরও কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সামনে এসেছে। গত মাসে মিসৌরির একটি কর্নফ্লেক্স কারখানায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওভেনের ভিতরে আটকে পড়ে একজন শ্রমিক মারা যান। পাশাপাশি, মিলানের বারগামো বিমানবন্দরে বিমানের ইঞ্জিনে ঢুকে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।
পরপর এমন ঘটনাগুলো কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে। মাংসের কিমা তৈরির মেশিনে কিশোরের পিষে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মুখ খুলেছেন। একজন লিখেছেন, “মেশিন পরিষ্কার করতে যাওয়ার আগে, তা চালু আছে কিনা দেখে নিতে হবে। এমন ভয়াবহ পরিণতি ভাবা যায় না।” আরেকজন তরুণটির পরিবারের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন, “হায় ঈশ্বর, ওঁর পরিবারের কথা ভেবে খারাপ লাগছে। ভাবা যায় না।”
ওই কারখানার এক প্রাক্তন কর্মী মন্তব্য করেছেন, “আমি ওখানে কাজ করতাম। স্পষ্ট মনে পড়ে, ফর্কলিফ্ট দিয়ে স্লাইডিং ডোর খোলার চেষ্টা হচ্ছিল। দরজাটাই খুলে পড়ে গিয়েছিল। একজন আঘাত পেয়েছিলেন।” যে কারখানায় এই ঘটনা ঘটেছে, সেই Tina’s Burritos কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। এই ঘটনা আবারও শিল্প ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।