“জমি জলে ডুবলেই টাকা দেওয়া হবে”-বড় ঘোষণা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা

একটানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র জল ছাড়ার জেরে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে চাষের জমির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন রাজ্য প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নবান্নে জরুরি বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব এবং উচ্চপদস্থ আমলাদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই আগেভাগে তদারকি শুরু করতে হবে। আগামী ৭ দিনের জন্য জেলাগুলিতে নিবিড় নজর রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
কৃষকদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস: “চিন্তা করবেন না, সরকার পাশে আছে”
বৃষ্টির জলে কৃষিজমি ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তিনি কৃষকদের আশ্বস্ত করে বলেন, “কৃষকদের আমি বলব আপনারা যে টাকাটা পাবেন এই বছরে, সেটা আমরা খুব শীঘ্রই দিতে শুরু করব। কিন্তু জমি যাঁদের জলের তলায় ডুবে যাবে, তাঁরা চিন্তা করবেন না। তাঁদের জন্য বীমা (Insurance) করা আছে। সরকার আপনাদের বীমার টাকার পুরোটাই দেয়। প্রতি বছরই এর জন্য আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। সেটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “শস্য ভাণ্ডার এবং কৃষক ভাণ্ডার যদি না বাঁচে, তাহলে মানুষের খাদ্যাভাব হতে পারে। কারণ বাংলা হচ্ছে ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। শস্যশ্যামল বাংলায় একদিকে যেমন জল জমে বর্ষায়, তেমনই এর থেকে কৃষকদের লাভও হয়। তার কারণ, এর জন্য ধান উৎপাদনে আমরা চলতি বছর ভারতে প্রথম হয়েছি। এই গৌরব রাজ্যের, এই গৌরব কৃষকদের। আপনারা ভাল থাকুন। আপনাদের পাশে সবসময় সরকার আছে।”
“বাংলার বাড়ি” প্রকল্পে গতি: ২৮ লক্ষ কাঁচা বাড়ি পাকা হচ্ছে
এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী “বাংলার বাড়ি” প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, “কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দিলেও আমরা বাংলার বাড়ির টাকা ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ সুবিধাভোগীকে দিয়ে দিয়েছি। আরও ১৬ লক্ষ পেয়ে যাবেন। একটা ধাপে ডিসেম্বরে দেওয়া হচ্ছে। তার পরের ধাপে মে মাসে পেয়ে যাবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ লক্ষ মাটির বাড়ি আমরা পাকা করে দিচ্ছি।”
বন্যা মোকাবিলায় কড়া নির্দেশ: জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে
লাগাতার বৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যেই কিছু নিচু এলাকা জলমগ্ন হতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক, পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনকে আগেভাগে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত জল বের করার ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন তিনি। রাজ্যের প্রশাসন সূত্রে খবর, সব জেলা প্রশাসনকে পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে এবং কোথাও জল জমে থাকলে দ্রুত তা সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই জরুরি বৈঠক এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ থেকে স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পুরোপুরি প্রস্তুত।