দূষণ ও অবৈধ শিকারের অভিশাপ – “রূপনারায়ণে মাছের মড়ক” জীবিকা সংকটে মৎস্যজীবীরা

হাওড়ার রূপনারায়ণ নদীতীরবর্তী বাগনান ও আমতা ব্লকের বাকসি, মানকুর, দেবগ্রামের কয়েকশো পরিবারের প্রধান জীবিকা মাছ ধরা। কিন্তু বর্তমানে এই রূপনারায়ণই যেন তাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীতে মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। সম্প্রতি নদীর বিভিন্ন অংশে মাছের মড়ক দেখা দেওয়ায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
কেন কমছে মাছ?
রূপনারায়ণ নদীতে মাছ কমে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন পরিবেশবিদ ও মৎস্যজীবীরা। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলি হল:
নাব্যতা হ্রাস: নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় মাছের স্বাভাবিক চলাচল ও প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।
দূষণ: বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং গৃহস্থালীর আবর্জনা সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে নদীর জল মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এতে মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে এবং মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।
অবৈধ মাছ ধরা: কারেন্ট জাল, রিং জাল এবং বৈদ্যুতিক শক মেশিনের মাধ্যমে নির্বিচারে মাছ শিকার করার কারণে মাছের সংখ্যা দ্রুত কমছে। বিশেষ করে ছোট মাছ এই পদ্ধতিতে ধরা পড়ার কারণে প্রজনন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে মাছের সংখ্যা হ্রাসে ভূমিকা রাখছে।
মাছের মড়ক: এক ভয়াবহ চিত্র
কয়েক দিন আগে বাগনানের মানকুর, বাকসি, কুলিয়া এলাকা দিয়ে যাওয়া রূপনারায়ণে প্রচুর মাছ মরা অবস্থায় ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। এই খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছন পরিবেশকর্মীরাও। তারা দেখতে পান, চেঙো, বোয়াল, শাল, পোনা মাছ মরে পচে গিয়ে ভাসছে। এর মধ্যে চেঙ মাছের মড়ক ছিল সবথেকে বেশি।
পরিবেশকর্মীরা জানান, রূপনারায়ণ জীববৈচিত্রে ভরপুর। গাঙ্গেয় শুশুক, ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং কচ্ছপ এখানে থাকে। কিন্তু এমনভাবে মাছ মরে যাওয়ার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কোনও কলকারখানার বিষাক্ত জল নদীতে মিশেছে, অথবা মাছ ধরার জন্য নদীর জলে মাত্রাতিরিক্ত বিষ মেশানোর ফলেই এই ঘটনা ঘটছে।
ইলিশের মরসুমে শঙ্কা: জীবিকা হারনোর ভয়
রূপনারায়ণের ইলিশের স্বাদ অতুলনীয়। ইলিশের মরশুম শুরু হওয়ার মুখে নদীতে এমন মাছের মড়ক শুরু হওয়ায় মৎস্যজীবীরা চরম শঙ্কিত। এমনিতেই মাছের অভাবে তাদের জীবিকা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তার উপর এই মড়ক তাদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মৎস্যজীবীরা এবং পরিবেশকর্মীরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। নদীর দূষণ রোধ, অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে রূপনারায়ণের মৎস্যসম্পদ এবং এর উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষের জীবন আরও সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।