“নিজের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে” বিচার চাইল নাবালিকা

মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে এক পৈশাচিক ঘটনা সামনে এসেছে, যা সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। নিজের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। এই নারকীয় ঘটনার পর নির্যাতিতা কিশোরী নিজেই সাহসের সঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আদালতের পথে বিচার: গোপন জবানবন্দি ও শারীরিক পরীক্ষা
মঙ্গলবার ধৃতকে চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্যাতিতা নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। এছাড়াও, বিচারকের সামনে তার গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য তাকেও এদিন আদালতে পেশ করা হয়। এই পদক্ষেপগুলি মামলার তদন্তে স্বচ্ছতা এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।
একাধিক বিয়ে, অনৈতিক কর্মকাণ্ড: এক অস্থির জীবন
অভিযুক্ত বাবা, পেশায় একজন দিনমজুর, তার বয়স মাত্র ৩৬ বছর। এই অল্প বয়সেই তার একাধিক বিয়ে করার ‘কীর্তি’ রয়েছে। একটি বা দুটি নয়, সে সাতবার বিয়ে করেছে এবং সাত স্ত্রীকে নিয়েই থাকে। দিনমজুরি করে যা উপার্জন হয়, তাতে এতজনের ভরণপোষণ সম্ভব হয় না, ফলে তার স্ত্রীরাও শ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য হন। এমন এক অস্থির পারিবারিক পরিস্থিতির মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর ১৪ বছরের মেয়ের উপর নেমে এসেছে এই চরম বিভীষিকা।
নাবালিকার সাহসী বয়ান: “বাবার প্রতি ঘেন্নায় আমার কথা বেরোচ্ছিল না”
নির্যাতিতা নাবালিকা তার দুঃস্বপ্নের রাতের বর্ণনা দিয়েছে। সে জানিয়েছে, “এর আগেও বাবা আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমার বাধায় তা করতে পারেনি। রবিবার দুপুরে আমি ঘরে ঘুমিয়েছিলাম। মা কাজে বেরিয়েছিল। সেই সময় বাবা আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। হঠাৎ আমার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়। তারপর আমাকে ধর্ষণ করে।”
সে আরও বলে, “বাবার প্রতি ঘেন্নায় আমার কথা বেরোচ্ছিল না। মা কাজ থেকে ফেরার পর সব কথা খুলে বলি। পরিবারের অসম্মানের কথা ভেবে মা প্রথমে চুপ করে ছিল। কিন্তু পরে মা আমাকে গোটা ঘটনা জানিয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে বলে। মায়ের সঙ্গে কথা বলেই আমি গতকাল সন্ধ্যায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ বাবাকে গ্রেফতার করেছে। আমি চাই, এই কাজের জন্য বাবার কঠোর শাস্তি হোক।”
মায়ের আকুতি: “ওর যেন ফাঁসি হয়”
নির্যাতিতার মা, যিনি নিজের স্বামীর এমন জঘন্য কীর্তিতে স্তম্ভিত, তিনিও বিচার চেয়েছেন। ক্ষোভ ও বেদনায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, “ও আমার স্বামী হলেও যে কাজ করেছে তার জন্য নরকেও ওর স্থান হবে না। নিজের মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করতে ওর বুক একবারও কাঁপল না? আমি ওর কঠোর শাস্তি দাবি করছি। ওর যেন ফাঁসি হয়। আইনের উপর আমার সেই আস্থা রয়েছে।”
চাঁচল মহকুমা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে পকসো (POCSO) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যেহেতু অভিযুক্তের সাতটি বিয়ে, তাই এই ঘটনার সঙ্গে স্ত্রীদের মধ্যে কোনও বিবাদ বা পারিবারিক কোনও চক্রান্ত রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনা কেবল একটি ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং পারিবারিক সম্পর্কের এক জঘন্য অধঃপতনকে তুলে ধরেছে।