মোদীর সভা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের বিস্ফোরক মন্তব্য -“আমি কাউকে ওড়াই না”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুরের জনসভা ঘিরে রাজ্য বিজেপিতে এক নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই সভায় দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে, যা সাম্প্রতিককালে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ নিয়ে জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে। দিলীপ ঘোষ নিজে স্পষ্ট জানিয়েছেন, দলের কর্মীদের ডাকেই তিনি এই সভায় যোগ দিচ্ছেন, কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ নয়।
কর্মীদের ডাকে সাড়া, নাকি নেতৃত্বের প্রতি বার্তা?
দিলীপ ঘোষের কথায়, দুর্গাপুরের দলীয় কর্মীরা তাঁকে অনুরোধ করেছেন, “দিলীপ দা আসুন, আমরা একসঙ্গে বসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য শুনি।” এই কর্মীদের ডাকে সাড়া দিয়েই তিনি যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। তবে তাঁর এই সফরকে অনেকেই নিছকই কর্মীদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে দেখছেন না। এর পেছনে রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি তাঁর এক প্রচ্ছন্ন বার্তা রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, একজন দলীয় কর্মী হিসেবেই তিনি দুর্গাপুরে যাবেন, কোনো নেতা বা পদাধিকারী হিসেবে নয়।
নাম না করে নিশানা: “আমার আমলেই এরা পার্টিতে এসেছিলেন”
এদিন দিলীপ ঘোষের কথায় সুস্পষ্টভাবে রাজ্য বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল। তিনি বলেন, “আমি কারওর সার্টিফিকেট চাইনি। কাউকে ওড়াতে চাই না। আমার আমলেই এরা পার্টিতে এসেছিলেন। তাদের নিয়ে পার্টি কাজ করে এগিয়ে গিয়েছে।” এই মন্তব্য রাজ্য বিজেপির অন্দরে তাঁর একদা প্রভাব এবং বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েনকেই তুলে ধরেছে।
এখানেই না থেমে দিলীপ ঘোষ আরও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন: “দল এখন কেন এগিয়ে যাচ্ছে না?” তিনি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন, যা বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের কার্যকারিতা নিয়ে পরোক্ষভাবে প্রশ্ন তুলেছে।
‘দিলীপ ঘোষ তৈরি রয়েছে’: ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, “দিলীপ ঘোষ তৈরি রয়েছে। রাস্তায় রয়েছে। কর্মীদের মাঝে রয়েছে।” তিনি জানান, দল তাঁকে যে কাজ দিয়েছে, সেই কাজ তিনি করেছেন এবং ভবিষ্যতেও দল তাঁকে যে কাজ দেবে, তা তিনি করবেন। তাঁর শেষ কথা ছিল, “দল যে ভাবে ব্যবহার করবে, সেইভাবেই তিনি কাজ করবেন। ম্যাঁয় হু না!” এই উক্তিটি তাঁর পুনরায় সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তাঁর উপলব্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে মোদীর অন্য কিছু সভায় দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, সেই সময় তিনি নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলেই উপস্থিত হতে পারেননি।
শমীক ভট্টাচার্যের সভাপতি পদে আসীন হওয়ার পর নতুন অধ্যায়
রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে শমীক ভট্টাচার্য আসীন হওয়ার পরই দিলীপ ঘোষের রাজনীতিতে সক্রিয়তা বেড়েছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শমীক ভট্টাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দিলীপ ঘোষের মানভঞ্জনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং দিলীপ ঘোষও তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। শমীক সভাপতি হওয়ার পরই দিলীপকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল এবং তিনি দিল্লিতে গিয়েছিলেনও। এই ঘটনাগুলি দিলীপ ঘোষের পুনর্বাসন এবং রাজ্য বিজেপিতে তাঁর ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের ইঙ্গিত বহন করছে।
রাজনৈতিক মহলে এখন একটাই প্রশ্ন, মোদীর সভায় দিলীপ ঘোষের এই উপস্থিতি এবং তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যগুলি রাজ্য বিজেপির ভবিষ্যৎ গতিপথে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই দেখার।