মহাকাশে ভারতীয় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা “শুভাংশু ভারতের হয়ে বিশেষ ৬টি পরীক্ষা করেছিলেন” জানেন সেগুলি কী কী ?

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে ভারতীয় মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার সফল প্রত্যাবর্তন কেবল একটি ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের অংশ হিসেবে আইএসএস-এ অবস্থানকালে শুভাংশু শুক্লা ৬০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছয়টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিকল্পিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলি ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযান এবং পৃথিবীতে মানব কল্যাণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

মহাকাশে ভারতীয় প্রতিভার উন্মোচন: শুভাংশুর ৬টি বিশেষ পরীক্ষা
শুভাংশু শুক্লা যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন, সেগুলি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং মহাকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন:

১. অপুষ্টির সমাধান মহাকাশে? ক্ষুদ্র শৈবাল নিয়ে গবেষণা: ডিবিটি-র (বায়োটেকনোলজি বিভাগ) আইসিজিইবি এবং এনআইপিজিআর দ্বারা বিকশিত খাদ্য উপযোগী ক্ষুদ্র শৈবালের উপর ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণ এবং বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। এই গবেষণা ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ যাত্রায় নভোচারীদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

২. মহাকাশে সালাদ চাষের সম্ভাবনা: কৃষি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ধারওয়াড় এবং ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান ধারওয়াড় দ্বারা বিকশিত সালাদ তৈরির উদ্ভিদের বীজ মহাকাশে অঙ্কুরিত করার পরীক্ষা করা হয়েছে। এটি মহাকাশচারীদের জন্য তাজা খাদ্যের উৎস তৈরি করার সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।

৩. টার্ডিগ্রেডের রহস্য উন্মোচন: আইআইএসসি বেঙ্গালুরু এবং ডিবিটি-র অধীনে ইনস্টিটিউট অফ স্টেম সেল সায়েন্স অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন দ্বারা বিকশিত এই পরীক্ষায় মহাকাশে ইউটার্ডিগ্রেড প্যারাম্যাক্রোবায়োটাস (BLR স্ট্রেইন) নামক এক বিশেষ অণুজীবের বেঁচে থাকা, পুনরুজ্জীবিত হওয়া, প্রজনন এবং ট্রান্সক্রিপ্টোম বোঝা হয়েছে। ০-১৫০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং বিকিরণেও বেঁচে থাকতে সক্ষম এই ‘আট-পাওয়ালা অণুজীব’ মহাকাশে চরম পরিস্থিতিতে জীবনের রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে। ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণের অধীনে পেশী পুনর্জন্মের উপর বিপাকীয় পরিপূরকগুলির প্রভাব বোঝার জন্যও এই পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. মানুষ-যন্ত্রের মিথস্ক্রিয়া মহাকাশে: আইআইএসসি দ্বারা বিকশিত এই পরীক্ষায় ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লের সাথে মানুষের মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে মহাকাশযানের নকশা এবং নভোচারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

৫. সায়ানোব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা: ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (আইসিজিইবি) দ্বারা তৈরি এই পরীক্ষায় ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণে ইউরিয়া এবং নাইট্রেটের উপর সায়ানোব্যাকটেরিয়ার তুলনামূলক বৃদ্ধি এবং প্রোটিওমিক প্রতিক্রিয়া বোঝা হয়েছে। এই গবেষণা মহাকাশে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার নতুন পথ খুলে দিতে পারে।

৬. মহাকাশে শস্যের ফলন বৃদ্ধি: ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান (আইআইএসটি), মহাকাশ বিভাগ এবং কৃষি মহাবিদ্যালয় ভেল্লয়ানি কেরালা দ্বারা বিকশিত এই পরীক্ষায় খাদ্যশস্যের বীজের বৃদ্ধি এবং ফলনের উপর ক্ষুদ্র মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে চাঁদ বা মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ভবিষ্যতের দিশারী
শুভংশু শুক্লার এই সফল মিশন এবং তাঁর দ্বারা পরিচালিত এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। এটি কেবল বর্তমান প্রজন্মের বিজ্ঞানীদেরই নয়, বরং ভবিষ্যতের মহাকাশচারী এবং বিজ্ঞানীদেরও অনুপ্রাণিত করবে। এই গবেষণাগুলির ফলাফল ভারতের মহাকাশ অভিযানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং মহাকাশে ভারতের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইসরো এখন এই তথ্যগুলির গভীর বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের মহাকাশ কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করবে, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে মানবজাতির অগ্রগতির পথে।