দুর্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সভায় দিলীপ ঘোষ, আমন্ত্রণ না পেলেও উপস্থিতির ঘোষণা, জল্পনা নতুন করে!

ফের সক্রিয় হলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আগামী ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভায় তাঁর উপস্থিত থাকার কথা নিজেই জানিয়ে দিলেন তিনি। এই ঘোষণা ঘিরে রাজ্য বিজেপির অন্দরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে, কারণ দিলীপ ঘোষের দাবি, দলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাননি। যদিও রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য পূর্বে জানিয়েছিলেন যে, দিলীপ ঘোষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আমন্ত্রণ বিতর্ক ও দিলীপের সিদ্ধান্ত:
বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ঘিরে জল্পনা ও বিতর্কের যেন শেষ নেই। আগামী ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভা রয়েছে, যেখানে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকা স্বাভাবিক। দিলীপ ঘোষ এই সভায় উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা নিয়ে এতদিন জল্পনা চলছিল। তবে এই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইটিভি ভারতকে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত থাকবেন।

আমন্ত্রণ নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পাই বা না পাই, দলের কর্মী হিসেবে আমি ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে দুর্গাপুরে যাব। টিভিতে শোনার চেয়ে আমি সামনে গিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনব।”

মঞ্চে দেখা যাবে কি?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁকে মঞ্চে দেখা যাবে কিনা, এই প্রশ্নে দিলীপ ঘোষের উত্তর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “দল যদি মঞ্চে থাকতে বলে তাহলে তিনি নিশ্চয়ই থাকবেন। না হলে দলের সাধারণ কর্মী হিসেবে সাধারণ দর্শক আসনেই বসবেন।”

জানা গেছে, ১৭ জুলাই রাতে দিলীপ ঘোষ দুর্গাপুর পৌঁছবেন এবং পরের দিন অর্থাৎ ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাবেন। নয়া নির্বাচিত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরেই দিলীপ ঘোষ ও বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল দিল্লি গিয়েছিলেন। তাঁর হঠাৎ দিল্লি যাওয়ার কারণ নিয়েও দলের অন্দরে জল্পনা চলছিল। তবে কি ১৮ জুলাইয়ের মঞ্চে দিলীপ ঘোষের জন্য কোনো বড় দায়িত্বের ঘোষণা হবে? এই সব জল্পনা উড়িয়ে দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন যে, দলের কয়েকজন নেতা এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেই তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন। এছাড়াও সংসদে কিছু কাজও ছিল।

‘তৃণমূল-যোগ’ জল্পনা খারিজ:
অন্যদিকে, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দিলীপ ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে পারেন বলে যে জোর চর্চা চলছিল, সেই বিষয়টিও তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। বিজেপির এই দুঁদে নেতা জানিয়েছেন, “এইসব ঘটনা শুধু বাংলাতেই হয়। দিল্লিতে এইসব নিয়ে কোনও রটনা নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই বিষয় নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই। তিনি দলের মধ্যেই রয়েছেন। কেউ যদি তার সঙ্গে কোনওদিন দূরত্ব তৈরি করে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

সাধারণ কর্মী হিসেবে দিলীপের উপস্থিতি:
এর আগেও দিলীপ ঘোষকে এমন পরিস্থিতিতে দেখা গেছে। গত ৬ মার্চ, ২০২৪ সালে যখন বারাসতে প্রধানমন্ত্রীর সভা হয়েছিল, তখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার। সেবারও দিলীপ ঘোষ দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনওরকম আমন্ত্রণ পাননি। তবে পদ্ম শিবিরের একজন একনিষ্ঠ এবং বর্ষীয়ান কর্মী হিসেবে তিনি সাধারণ দর্শকদের আসনে বসেই পুরো সভা শুনেছিলেন।

তারও আগে গত ২৯ মে, ২০২৪ সালে কলকাতায় যখন প্রধানমন্ত্রীর রোড শো হয়েছিল, তখনও তৎকালীন রাজ্য সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদারের পক্ষ থেকে কোনও আমন্ত্রণ পত্র বা ফোন পাননি দিলীপ ঘোষ। সেবারও একেবারে দর্শকদের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর রোড শো দেখেছিলেন।

দিলীপ ঘোষের এই পদক্ষেপ রাজ্য বিজেপির বর্তমান অভ্যন্তরীণ সমীকরণ এবং তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আরও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।