“বিদ্বেষ ছড়ালে পদক্ষেপ, তবে…?”-সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে বড় নির্দেশ সুপ্রিমকোর্টের

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষমূলক পোস্ট এবং ঘৃণা ছড়ানোর প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছে যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে সবকিছুকেই ন্যায্য বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে, যা একটি ‘মারাত্মক প্রবণতা’। বিচারপতি বিভি নাগারথনা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ ফ্রান্সিস বিশ্বনাথনের বেঞ্চ শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে দায়ের করা ওয়াজাহাত খানের মামলার ভিত্তিতে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে।

কেন্দ্র ও রাজ্যকে সজাগ থাকার নির্দেশ
আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, যে পোস্ট বা মন্তব্য ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ায়, সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত। কেন্দ্র ও রাজ্য-উভয় সরকারকেই এই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। তবে একই সাথে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যাতে কারও বাক স্বাধীনতা খর্ব না হয়, কারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার এবং এর মূল্য ও গুরুত্ব সবারই বোঝা প্রয়োজন।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া কখনও কাম্য নয় যাতে বারবার রাজ্য বা কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। ঘৃণামূলক বক্তব্য যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। সাধারণ নাগরিকদেরও উচিত ঘৃণা ছড়ানো থেকে বিরত থাকা। যে সব পোস্ট সমাজের জন্য ক্ষতিকারক, সেগুলো পোস্ট, লাইক বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।

‘একবার পোস্ট করলে তা চিরতরে থেকে যায়’
এদিনের মামলায় ওয়াজাহাত খানের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের পুরোনো পোস্টের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। আইনজীবী জানান, তাঁদের নিজের করা অভিযোগের জেরে এখন তাঁরা নিজেরাই বিপদে পড়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আদালত বিবেচনা করে দেখুক, যে এফআইআর হয়েছে সেগুলো ট্যুইট সম্পর্কিত কিনা।”

ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, প্রতিবার নতুন নতুন অভিযোগ করে কোনও একজনকে জেলে পাঠানোর কোনও অর্থ হয় না, এর থেকে কোনও সমাধানই বের হবে না। তখনই মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার নিয়ে বিচারপতি বিভি নাগারথনা বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্ট করার পর তা মুছে ফেলার কোনও অর্থ নেই। একবার ইন্টারনেটে কোনও জিনিস পোস্ট করলে তা চিরতরে থেকে যায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এর অপব্যবহার করলে পরিণাম খারাপ হয়। আদালতে ভিড় বাড়ে।”

ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুনের শুনানিতে বিচারপতি এজি বিশ্বনাথন এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিয়ের বেঞ্চ অসম, দিল্লি, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ জারি করেছিল। ওয়াজাহাত খানের আবেদনের ভিত্তিতে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন যে তাঁর বিরুদ্ধে যত এফআইআর হয়েছে, সবগুলোকে একত্রিত করে একটি মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হোক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী পোস্ট করার অভিযোগে বিভিন্ন রাজ্যে ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দায়ের করা একটি এফআইআরের জেরে তাঁকে পুলিশ হেফাজতেও থাকতে হয়েছে এবং অন্য একটি মামলায় তিনি বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। গত ৯ জুন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।