রাজভবনে ‘স্মৃতি বন’ ও ‘জন উদ্যান’ উদ্যোগ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে সামিল রাজ্যপাল ও পড়ুয়ারা

বনমহোৎসব সপ্তাহ উপলক্ষে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিল রাজভবন। সোমবার রাজভবন স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে ১০১টি বৃক্ষরোপণ করে। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য শুধু পরিবেশ সংরক্ষণই নয়, বরং রাজভবনকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি করে ‘জন রাজভবন’-এ পরিণত করা।

‘স্মৃতি বন’ এবং ‘এক পেড় মা-এর নামে’
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস একটি চন্দনগাছের চারা রোপণ করে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন। এই অনুষ্ঠানেই একটি বিশেষ ‘স্মৃতি বন’ গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করা হয়। এই ‘স্মৃতি বন’-এ সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রয়াত প্রিয়জনদের স্মরণে একটি করে গাছ লাগাতে পারবেন। এর মাধ্যমে যেমন স্মৃতির মর্যাদা রক্ষা হবে, তেমনই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখা যাবে। রাজ্যপাল এই উদ্যোগকে ‘এক পেড় মা-এর নামে’ (মায়ের নামে একটি গাছ) এই ভাবনার বাস্তবায়ন বলে উল্লেখ করেন।

রাজ্যপাল সকলকে পরিবেশ সংরক্ষণ ও সজীবীকরণের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজনের কাজে যুক্ত হলে প্রকৃতি নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে।”

‘জন উদ্যান’ – এক নতুন ভাবনা
রাজভবনের স্থাপনাগুলিকে সাধারণ মানুষের জন্য আরও অর্থবহ ও পরিবেশবান্ধব করে তুলতে রাজভবনের উদ্যানগুলি ‘জন উদ্যান’ নামে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজভবনের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক জানান, প্রথম পর্যায়ে কলকাতা রাজভবনের মূল ভবনের চারপাশের বাগান এবং অভ্যন্তরস্থ ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই উদ্যানগুলিকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গাছগাছালি, লতা-গুল্ম, ঔষধি ও সুগন্ধি গাছ, নানা ধরনের ঝোপ-জঙ্গল প্রভৃতি দিয়ে সাজানো হবে, যা শ্রেষ্ঠ উদ্যানগুলির আদলে তৈরি হবে। এই বাগানগুলি কেবল সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, উদযাপন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কার্যকর উদ্দেশ্যকেও সামনে রেখে গড়ে তোলা হবে। দর্শনার্থীদের জন্য এটি একটি মনোরম, শৈল্পিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবেও কাজ করবে।

উদ্যানের বৈচিত্র্য ও আধুনিক কৃষি পদ্ধতি
রাজভবনের ওই আধিকারিক আরও জানান যে, কলকাতা রাজভবন, দার্জিলিং রাজভবন এবং ব্যারাকপুরের ফ্ল্যাগস্ট্যাফ হাউসের বিস্তীর্ণ উদ্যানগুলিকে সুদৃশ্য ও কার্যকরভাবে গড়ে তোলার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যানগুলি শুধু বিশুদ্ধ অক্সিজেনের উৎস হবে না, সাধারণ মানুষের জন্যও বহুমুখীভাবে উপযোগী করে তোলা হবে।

বাগানের বিভিন্ন অংশে থাকবে গোলাপ বাগান, ঔষধি গাছের ‘সঞ্জীবনী উদ্যান’, আমের বাগান, শাকসবজি ও ফলের বাগান প্রভৃতি। আধুনিক কৃষির বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন নিখুঁত কৃষি (Precision Farming), মৎস্য চাষ (Pisciculture), হাইড্রোফনিক (Hydroponic) ও অ্যাগ্রোপনিক (Aeroponic) চাষের প্রযুক্তিও এখানে প্রয়োগ করা হবে। বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রজাতি ও তাদের বৈচিত্র্য সম্পর্কে মানুষের মধ্যে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, আগ্রহ সৃষ্টি করাই এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য।

সম্মিলিত প্রচেষ্টা
এই বৃহৎ প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে বহু সরকারি ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, হর্টিকালচারাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রাজ্য পূর্ত বিভাগ (PWD) ইত্যাদি। এদের সহযোগিতাতেই ‘জন উদ্যান’ কর্মসূচি রূপ পেতে চলেছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজভবন সাধারণ মানুষের কাছে আরও সুগম হয়ে উঠবে এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতেও এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।