“টাকা নেই, পছন্দের জামা কিনে দিতে পারেননি মা”-অভিমানে ‘আত্মঘাতী’ MA পাশ তরুণী

পছন্দের পোশাক কিনে দিতে পারেননি মা, আর তার জেরেই অভিমানে এক তরুণীর রহস্যজনক আত্মহনন? নদিয়ার চাকদা থানার মলিচাগড় গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আর্থিক সমস্যার কারণে মেয়ের পছন্দের পোশাক কিনতে না পারায় অভিমান থেকে ওই তরুণী আত্মঘাতী হয়েছেন। ইতিমধ্যে তার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

মৃতা তরুণীর নাম চন্দনা সরকার। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি এম.এ. পাশ ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়ির ভেতর থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন চন্দনার একটি জামা পছন্দ হয়েছিল। মাকে তিনি সেই জামা কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তার মা সেই মুহূর্তে জামাটি কিনে দিতে পারেননি। এতে চন্দনা অভিমান করেছিলেন বলে দাবি পরিবারের।

এরপর চন্দনা তার মাকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। মা বাড়ি ফিরে এসে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তিনি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। প্রতিবেশীরা এসে তরুণীকে নামিয়ে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ইতিমধ্যেই পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। মেয়ের মৃত্যুতে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কান্না জড়ানো গলায় তিনি জানান, তার হাতে একেবারেই টাকা ছিল না, তাই মেয়েকে বলেছিলেন যে এই মুহূর্তে পোশাকটি কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। তাতে মেয়ে সন্তুষ্ট হননি।

তবে, একটি পোশাকের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া – এই ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনোবিদদের একাংশ। একজন মনোবিদের মতে, “সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচলন হওয়ার আগে লোকজনকে চমক দেওয়ার বিষয়টি কেবল ঘনিষ্ঠ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন রিল এবং ভিডিওর যুগ। অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ভয়ে (FOMO – Fear of Missing Out) ভোগেন। যার জন্য এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।”

এই ঘটনা আবারও তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে এবং ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত চলছে।