ধর্ষণের অভিযোগকারিণী তরুণী মনোবিদ, IIM পড়ুয়ার সঙ্গে ছিল পরিচয়, উঠে এল আরও তথ্য

দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) কলকাতা ক্যাম্পাসে এক বহিরাগত তরুণীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য। এই ঘটনায় অভিযুক্ত কর্নাটকের যুবক পরমানন্দ তোপ্পাঁওয়াকে শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয় এবং আদালত তাকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত পরমানন্দ আইআইএম কলকাতার ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

আদালতে সওয়াল-জবাব পর্বে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।

পরমানন্দের আইনজীবী শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় আদালতে সওয়াল করেন যে, অভিযোগকারী তরুণী একজন মনোবিদ ও সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলার। পরমানন্দের সঙ্গে তার সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয়েছিল এবং এরপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। অভিযোগকারী তরুণী শুক্রবার সকালেই জোকার আইআইএম কলকাতা ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন।

অভিযুক্তের আইনজীবী অভিযোগের ‘টাইমলাইন’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই তরুণীর খাবার খাওয়ার পর বমি ভাব আসে। তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। প্রথমে জোর করে শারীরিক হেনস্থা করা হয় এবং পরে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেলে পুনরায় শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অভিযোগে উল্লেখিত টাইমলাইনে বলা হয়েছে, তরুণী সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। অথচ, পুলিশ বলছে, রাত ৮টা ৩৫ মিনিটেই হরিদেবপুর থানা খবর পেয়েছে। আইনজীবীর প্রশ্ন, “একই সময়ে তিনি কী ভাবে দু’জায়গায় থাকতে পারেন?”

এছাড়াও, আইনজীবীর প্রশ্ন ছিল ঘটনাস্থল ‘লেক ভিউ হোস্টেল’ নিয়ে। তিনি যুক্তি দেন যে, সেখানে পৌঁছাতে গেলে একাধিক নিরাপত্তারক্ষীর মুখোমুখি হতে হয় এবং হোস্টেলে ঢোকার জন্য অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। অভিযোগে বলা হচ্ছে, তরুণীকে কোনো অনুমতি নিতে দেওয়া হয়নি। একজন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কী করে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনলেন, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন।

পাল্টা সওয়াল করেন সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল। তিনি দাবি করেন, “অভিযুক্ত প্রভাব খাটিয়ে নিরাপত্তারক্ষীকে প্রভাবিত করে তরুণীকে ভিতরে নিয়ে গিয়েছেন।” তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলে অভিযুক্তের মোবাইল ফোন ছিল এবং পুলিশ আশঙ্কা করছে যে ঘটনার ভিডিও করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “যে অবস্থায় তরুণী ছিলেন, তাতে আমাদের এই আশঙ্কা থাকছে। আমরা ফরেন্সিক ল্যাবে মোবাইল ফোন পাঠিয়ে সমস্ত ডেটা সংগ্রহ করব।” বিশাল রুমের ঠিক কোন অংশে এই ঘটনা ঘটেছে, তা জানার জন্য অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রেখে জেরা করার প্রয়োজনীয়তার উপর তিনি জোর দেন।

পরমানন্দের অন্য আইনজীবী সুব্রত সর্দার পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “পুলিশ আদালতে যে নথি পাঠিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সময়কাল সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। অথচ মেয়েটি যখন অভিযোগ করছেন, তখনও সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিট। একই সময়ে আইআইএম জোকা থেকে তিনি কী ভাবে হরিদেবপুর থানায় পৌঁছে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার।” পুলিশ অভিযুক্তকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত হেফাজতে চাইলেও আদালত ১৯ তারিখ পর্যন্ত হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

এই ঘটনার তদন্তে নতুন নতুন মোড় আসায় বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। পুলিশ এবং আইআইএম কর্তৃপক্ষ, উভয়ই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং ফরেন্সিক রিপোর্টের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।