গুরু পূর্ণিমার দিনই ভয়ঙ্কর পরিণতি, হিসারে স্কুলের প্রিন্সিপালকে কুপিয়ে খুন, অভিযুক্ত ৪ নাবালক ছাত্র

গুরু পূর্ণিমার পবিত্র দিনে শিক্ষক-গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পরিবর্তে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হলো হরিয়ানার হিসার। স্কুলের মধ্যেই ৫০ বছর বয়সী প্রিন্সিপাল জগবীর সিংকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তারই স্কুলের চার নাবালক ছাত্রের বিরুদ্ধে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের কিনারা করে অভিযুক্ত চার নাবালককে গ্রেপ্তার করেছে এবং খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করেছে।

মাদকাসক্তি, বকাঝকা এবং সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র

হিসারের বাস বাদশাহপুরের কার্টার মেমোরিয়াল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন জগবীর সিং। পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া চার নাবালক ছাত্রই মাদকাসক্ত ছিল এবং স্কুলের মধ্যে ড্রাগ সেবন করত। কয়েকজন সহপাঠী প্রিন্সিপালকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার পর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। মাদক নিয়ে স্কুলে আসার জন্য প্রিন্সিপাল জগবীর সিং ওই পড়ুয়াদের বাকি সহপাঠীদের সামনে তীব্র বকাঝকা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ওই চার ছাত্রের চুলের স্টাইল, পোশাক এবং চালচলন নিয়েও তিনি আপত্তি তুলেছিলেন এবং দ্রুত চুলের স্টাইল বদলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সহপাঠীদের সামনে এই বকাঝকার জন্য চারজনই মনে মনে প্রিন্সিপালের প্রতি ক্ষোভ পুষে রেখেছিল।

গুরু পূর্ণিমার দিনেও স্কুলের নিয়ম ভেঙে আবারও ব্যাগের মধ্যে মাদক আনার জন্য প্রিন্সিপাল জগবীর তাদের বকা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই চারজনের মধ্যে দুজন পড়ুয়া জগবীরের গ্রামের বাসিন্দা ছিল। তারাই খুনের পরিকল্পনা এবং অস্ত্র জোগাড় করে এনেছিল। বাকি দুজন সেই অস্ত্র দিয়ে প্রিন্সিপালকে কুপিয়ে খুন করে।

১০ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ ও অপরাধী চক্রের যোগসূত্র?

খুনি নাবালকরা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর একটি বাইক চুরি করে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে পালিয়ে যায়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি; বাস স্ট্যান্ডের সামনে থেকেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এফআইআরে বাইক চুরির ঘটনাটিও নথিভুক্ত হয়েছে।

তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই নাবালক পড়ুয়ারা ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। সম্ভবত সোশ্যাল মিডিয়া মারফত তারা কোনো অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং খুনের পরিকল্পনাটি সেই গ্যাংয়ের তরফেই করা হয়েছিল। পরিকল্পনামাফিক স্কুলের মধ্যেই প্রিন্সিপালকে খুন করে তারা।

দোষ স্বীকার ও পুলিশের তৎপরতা

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চার পড়ুয়াই খুনের ঘটনাটি স্বীকার করে নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, স্কুলে মাদক আনার জন্য এবং চুলের স্টাইল নিয়ে সহপাঠীদের সামনে বকাঝকার জন্যই প্রিন্সিপালের প্রতি তাদের ক্ষোভ ছিল এবং সুযোগ বুঝে স্কুলের মধ্যেই খুনের ঘটনাটি ঘটায়। এরপর জানাজানি হতেই তারা পালিয়ে যায়।

পুলিশ এই ঘটনায় মামলা রুজু করে তদন্ত জারি রেখেছে। এই ধরনের একটি নৃশংস ঘটনা, যেখানে স্কুলের ছাত্ররাই তাদের প্রিন্সিপালকে খুন করছে, তা সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থায় গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। নাবালক অপরাধীদের বেড়ে চলা প্রবণতা এবং মাদকাসক্তির মতো বিষয়গুলো আবারও সমাজের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল।