আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা, উড্ডয়নের ৩২ সেকেন্ডেই বিভ্রাট, ইঞ্জিন বন্ধ নিয়ে পাইলটদের কথোপকথন!

গত ১২ জুন আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি ভেঙে পড়ার মাত্র ৩২ সেকেন্ড আগে তার দুটি ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহের সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পাইলটের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

সকাল থেকে দুর্ঘটনা পর্যন্ত: মিনিট টু মিনিট ঘটনাপ্রবাহ

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন-গ্যাটউইকগামী এয়ার ইন্ডিয়া ড্রিমলাইনারের সেই অভিশপ্ত দিনের ঘটনাপ্রবাহ ছিল নিম্নরূপ:

১১:১৭ মিনিট: এয়ার ইন্ডিয়া ড্রিমলাইনার VT-ANB বিমানটি AI-423 হিসাবে নয়াদিল্লি থেকে আহমেদাবাদে আসে। এই বিমানটিই AI-171 হিসেবে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল।

১৩:১৩ মিনিট: বিমানটি পুশব্যাক (পেছন দিকে ঠেলে দেওয়া) এবং স্টার্ট-আপের (ইঞ্জিন চালু করার) জন্য অনুরোধ জানায়।

১৩:১৩:১৩ সেকেন্ড: এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (এটিসি) তাতে ছাড়পত্র দেয়।

১৩:১৬:৫৯ সেকেন্ড: এটিসি স্টার্ট-আপে সম্মতি দেয়।

১৩:১৮:৩৮ সেকেন্ড: বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের ৩৪ নম্বর বে থেকে রানওয়ের দিকে রওনা দেয়।

১৩:১৯:১২ সেকেন্ড: এটিসি বিমানকে জিজ্ঞাসা করে পুরো রানওয়েটি তাদের দরকার কিনা। বিমানের তরফে জানানো হয় ২৩ নম্বর রানওয়ের পুরোটাই তাদের প্রয়োজন।

১৩:২৫:১৫ সেকেন্ড: বিমান রানওয়ে ক্লিয়ারেন্সের অনুরোধ জানায় এবং এটিসি তাতে সম্মতি দেয়।

১৩:২৬:০০ সেকেন্ড: ২৪ নম্বর ট্যাক্সিওয়ে হয়ে ২৩ নম্বর রানওয়েতে পৌঁছয় এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 ড্রিমলাইনার। উড়ানের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

১৩:৩২:০৩ সেকেন্ড: বিমান গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে টাওয়ার কন্ট্রোলের আওতায় পৌঁছয়। অর্থাৎ, রানওয়েতে বিমানের গতিবিধি পরিচালনা করে যে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল, সেখান থেকে বিমান ওড়ানো এবং অবতরণের জন্য টাওয়ার কন্ট্রোলের হাতে বিমানের নিয়ন্ত্রণ যায়।

১৩:৩৩:৪৫ সেকেন্ড: বিমানটিকে ২৩ নম্বর রানওয়েতে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৩.৩৭:৩৭ সেকেন্ড: এটিসি ২৩ নম্বর রানওয়ে থেকে উড়ানের ছাড়পত্র দেয়।

১৩.৩৭:৩৭ সেকেন্ড: টেক-অফ প্রক্রিয়া শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171। বিমানে কর্মী-সহ ২৪২ জন ছিলেন।

১৩:৩৮:৩৯ সেকেন্ড: রানওয়ে ছেড়ে আকাশে উড়ান শুরু।

১৩:৩৮:৪২ সেকেন্ড: বিমানের সর্বোচ্চ গতি ১৮০ নটসে পৌঁছয়।

ইঞ্জিন বিভ্রাট ও পাইলটদের কথোপকথন

প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, এরপরই ১ নম্বর ও ২ নম্বর ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহের সুইচ দুটি এক মিনিটের ব্যবধানে ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অর্থাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আর জ্বালানি না পাওয়ায় ইঞ্জিন দুটির গতি ক্রমশ কমতে শুরু করে।

এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়েছে চাঞ্চল্যকর কথোপকথন। এক পাইলটকে বলতে শোনা যায়, “সুইচ বন্ধ করলে কেন?” তখন আরেক পাইলট উত্তর দিচ্ছেন, “আমি বন্ধ করিনি।”

১৩:৩৮:৪৭ সেকেন্ড: এন১ এবং এন২ – দুটি ইঞ্জিন ন্যূনতম শক্তি হারিয়ে ফেলে। র্যাম এয়ার টারবাইন (আরএটি) খুলে যায় এবং পাম্প হাইড্রোলিক শক্তি জোগাতে থাকে।

১৩:৩৮:৫২ সেকেন্ড: এদিকে, এন১ ইঞ্জিন ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’ অর্থাৎ চালু হওয়ার চেষ্টা করে। সুইচ জ্বলে ওঠে।

১৩:৩৮:৫৬ সেকেন্ড: এন২ ইঞ্জিনও ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’ অর্থাৎ চালু হয়ে যায়। দুটি ইঞ্জিন সচল হওয়ার চেষ্টা করে। এক নম্বর ইঞ্জিনটি চালু হওয়ার পথে থাকলেও, দুই নম্বর ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর গতি কমাতে ব্যর্থ হয়।

১৩:৩৯:০৫ সেকেন্ড: একজন পাইলট সাহায্য চেয়ে ‘মেডে, মেডে, মেডে’ বলতে থাকেন।

১৩:৩৯:১১ সেকেন্ড: বিমানের ডেটা রেকর্ডার বন্ধ হয়ে যায়।

১৩:৪৪:৪৪ সেকেন্ড: দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান থেকে আগুন বেরোতে দেখে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রী ও দুই পাইলট এবং ক্রু সদস্যের মৃত্যু হয়। মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন প্রাণ হারান। বিমানটি মেঘানিনগরে ডাক্তার পড়ুয়াদের হস্টেলের উপর ভেঙে পড়েছিল।

প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে আসা তথ্যগুলি দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে গভীর রহস্য সৃষ্টি করেছে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার কারণ এবং পাইলটদের মধ্যে হওয়া কথোপকথন আরও বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।