আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ইঞ্জিন বন্ধ করেন এক পাইলট’, চাঞ্চল্যকর দাবিতে কুনো বিতর্ক

গত ১২ জুন আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট সামনে আসার পর থেকেই নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের অন্যতম বেসরকারি বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন মোহন রঙ্গনাথন ভয়ঙ্কর এক আশঙ্কা প্রকাশ করে দাবি করেছেন যে, দুই চালকের মধ্যে একজন হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
‘ম্যানুয়ালি’ ইঞ্জিন বন্ধের রহস্য
ক্যাপ্টেন রঙ্গনাথনের দাবি, বিমানটির দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি কন্ট্রোল সুইচ (Fuel Control Switch) একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর মতে, এটি কেবল ম্যানুয়ালি বা হাত দিয়ে করা সম্ভব। কোনো সফটওয়্যার ত্রুটি বা মারাত্মক টার্বুলেন্সের কারণে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এএআইবি (Aircraft Accident Investigation Bureau) কর্তৃক জমা দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টেও বলা হয়েছে, রানওয়ে ছাড়ার পরপরই বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ একসঙ্গে ‘রান’ থেকে ‘কাট অফ’ অবস্থায় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এই সুইচগুলো ঘোরাতে যথেষ্ট জোর প্রয়োগ করতে হয় বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে সন্দেহ
ক্যাপ্টেন রঙ্গনাথন ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়া কথোপকথনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। রেকর্ডারে এক পাইলটকে অন্যজনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, “তুমি এটা করলে কেন?” এবং জবাবে অন্যজন বলছেন, “আমি করিনি।” এই কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে তিনি আশঙ্কা করছেন, সম্ভবত দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেই পাইলটদের একজন মানসিক চাপ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করেছেন।
তার আরও চাঞ্চল্যকর দাবি, যে পাইলট এই কাজ করেছেন, তিনি সম্ভবত মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এবং কিছুদিন চিকিৎসার জন্য ছুটিতেও ছিলেন। যদিও এই বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
বিশ্বজুড়ে একই ধরনের ঘটনা ও ভারতে পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্য
রঙ্গনাথন স্মরণ করিয়ে দেন যে, এ ধরনের ঘটনা এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটেছে। ২০১৫ সালে জার্মানউইংস বিমানের এক পাইলট যাত্রীসহ প্লেনটি পাহাড়ের গায়ে ফেলে দিয়েছিলেন। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০-এর দুর্ঘটনাতেও পাইলটের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ ছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, ভারতে পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আলাদাভাবে নজর দেওয়া হয় না। এমনকি, বিমান সংস্থা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাও শুধু উড়ান পরিচালনা ও সময়সূচী নিয়ে চিন্তিত থাকে। দীর্ঘক্ষণ কাজের চাপ, ঘুমের অভাব, পরিবার থেকে দূরে থাকা – সব মিলিয়ে অনেক সময় পাইলটরা মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েন, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে উড়ানের নিরাপত্তায়।
মন্ত্রকের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন
এদিকে, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী কিঞ্জারাপু রাম মোহন নাইডু জানিয়েছেন, প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়। চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করাও ঠিক হবে না।
তবে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের এমন চাঞ্চল্যকর আশঙ্কা আবারও ভারতের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পাইলটদের নজরদারি এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টেই হয়তো এই মর্মান্তিক ঘটনার নেপথ্যের প্রকৃত কারণ উন্মোচিত হবে।