পরিযায়ী হেনস্থার আগুনে ঘি, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্যে ‘বাঙালি বিরোধী বিজেপি’ স্লোগানে উত্তাল তৃণমূল

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাম্প্রতিক এক মন্তব্য ঘিরে নতুন করে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা পরিযায়ী শ্রমিক হেনস্থার ইস্যুকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বিজেপি বাংলা বিরোধী’ প্রচার অভিযানকে আরও ইন্ধন যুগিয়েছে। হিমন্তের মন্তব্যে ‘বিজেপির বাংলা ঘৃণা’ আরও একবার প্রতিফলিত হয়েছে বলে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি হিমন্তের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছেন।

হিমন্তের মন্তব্যে কুণাল ঘোষের ক্ষোভ

শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, “হিমন্তের ক্ষমা চাওয়া উচিত। হিমন্ত যদি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বলে থাকেন, সেই ব্যর্থতা স্বরাষ্ট্র দফতরের।” তিনি হিমন্তের বিতর্কিত মন্তব্য, “মাতৃভাষা বাংলা লিখলেই বোঝা যাবে অসমে কত বিদেশি আছে” উদ্ধৃত করে এক্স হ্যান্ডেলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, লিখেছেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী এসব কী চলছে?”

কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “বিজেপি বঙ্গবাসী এবং বঙ্গভাষী বিরোধী।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাঙালি অস্মিতায় আঘাত—তা নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন করবে তৃণমূল।”

পরিযায়ী শ্রমিক হেনস্থা ও তৃণমূলের অভিযোগ

সাম্প্রতিক সময়ে ভিন রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার ঘটনা বেড়েই চলেছে। নদীয়ার কালীগঞ্জ থানার হাটগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অনন্তপুর, বসরখোলা গ্রাম-সহ একাধিক গ্রামের বহু পরিযায়ী শ্রমিক ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক হয়েছেন। একই হাল বর্ধমানের কেতুগ্রামের চর সুজাপুর গ্রামের ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকেরও।

এই ঘটনাগুলির প্রসঙ্গ টেনে কুণাল ঘোষ দাবি করেন, যা চলছে তাতে বিজেপির বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক মনোভাবই প্রতিফলিত হচ্ছে। ক্ষোভের সুরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “বাংলা বললেই বাংলাদেশি বলছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী সব সীমা লঙ্ঘন করলেন। বিজেপি বাংলা বাঙালিকে ঘৃণা করে।”

তৃণমূলের আগ্রাসী প্রচার কৌশল

চলতি মাসেই তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে ‘বিজেপি বাংলা বিরোধী’ এই মর্মে বিশেষ প্রচার অভিযান শুরু করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা এবং বিজেপি নেতাদের ‘বাংলা বিরোধী’ মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তৃণমূল আসন্ন নির্বাচনে বাঙালি আবেগ উসকে দিতে চাইছে। কুণাল ঘোষের আজকের আক্রমণাত্মক মন্তব্য সেই প্রচার অভিযানেরই অংশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখন দেখার, এই ইস্যুতে বিজেপি কী জবাব দেয় এবং এই বিতর্ক আগামী দিনে বাংলার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।