শুরু অমরনাথ যাত্রা, পুণ্যযাত্রা সফল করতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন শিব’

শ্রাবণের পবিত্র আবহে শুরু হয়েছে অমরনাথ যাত্রা, আর এই পুণ্যযাত্রা যেন কোনওভাবে বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবার শুরু করেছে ‘অপারেশন শিব’। তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাত্রা সুনিশ্চিত করতে ৮৫০০-এরও বেশি সেনা জওয়ানের মোতায়েন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং এক বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যা এই যাত্রাকে দেশের অন্যতম সুরক্ষিত তীর্থযাত্রায় পরিণত করেছে।
গত ৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই অমরনাথ যাত্রা অনন্তনাগ জেলার ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নুনওয়ান-পহেলগাঁও রুট এবং গান্দেরবাল জেলার ১৪ কিলোমিটার ছোট ও খাড়া বালতাল রুটে চলছে। ৯ অগস্ট এই যাত্রা শেষ হবে। সেনার এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, “অমরনাথ যাত্রা সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী, প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে অপারেশন শিব শুরু করেছে।”
বহুস্তরীয় নিরাপত্তা গ্রিড: প্রযুক্তি ও মানবিক সহায়তা
সেনা মুখপাত্র জানান, এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হল উত্তর ও দক্ষিণ উভয় যাত্রাপথে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘেরাটোপ তৈরি করা। বিশেষ করে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাক-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলির গতিবিধি বাড়ার আশঙ্কায় বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে। ৮৫০০ জনেরও বেশি সেনা জওয়ানকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত এবং পরিচালনামূলক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
এটি একটি বহু-স্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ, যার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী গ্রিড, প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা মোতায়েন এবং করিডোর সুরক্ষা ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত। অসামরিক কর্তৃপক্ষকেও সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে, বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের যাবতীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: ড্রোন হামলা রুখতে C-UAS সিস্টেম
অমরনাথ যাত্রাপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নিয়মিত ইউএভি (Unmanned Aerial Vehicle) মিশন, যাত্রাপথ এবং গুহার সরাসরি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি, ড্রোন হামলা আটকানোর জন্য ৫০টিরও বেশি কাউন্টার-আনম্যানড এয়ার সিস্টেম (C-UAS) এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (EW) সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এই C-UAS গ্রিডগুলি যাত্রা পথে এবং গুহার আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে, যা আকাশপথে যেকোনো অবাঞ্ছিত গতিবিধি রুখতে সক্ষম।
এছাড়াও, সেতু, রেলপথ এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ইঞ্জিনিয়ার টাস্ক ফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে ১৫০০ জনেরও বেশি ডাক্তার এবং চিকিৎসা কর্মী, দুটি উন্নত ড্রেসিং স্টেশন, নয়টি চিকিৎসা সহায়তা পোস্ট, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল এবং ২৬টি অক্সিজেন বুথ, যেখানে ২ লক্ষ লিটার অক্সিজেন মজুত রয়েছে।
নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য সিগন্যাল কোম্পানি, প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ইএমই ডিটাচমেন্ট এবং প্রয়োজনে বোমা চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিশেষ স্কোয়াডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে। তীর্থযাত্রী এবং অন্যান্যদের জন্য ২৫ হাজার ব্যক্তির জন্য জরুরি রেশন, কিউআরটি (Quick Reaction Team), তাঁবু এবং জলের পয়েন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ১.৪০ লক্ষেরও বেশি তীর্থযাত্রী ভগবান শিবের বরফ লিঙ্গ দর্শন করেছেন। এখন পর্যন্ত চার লক্ষেরও বেশি ব্যক্তি তীর্থযাত্রার জন্য অনলাইনে নথিভুক্ত করেছেন। গত বছর ৫.১০ লক্ষেরও বেশি তীর্থযাত্রী অমরনাথে গিয়েছিলেন। ‘অপারেশন শিব’-এর লক্ষ্য পবিত্র তীর্থযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সকল ভক্তের জন্য একটি নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন এবং আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ যাত্রা নিশ্চিত করা, যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অটল প্রতিশ্রুতি নিয়ে বদ্ধপরিকর।