‘বিপ্লবী মানে সন্ত্রাসবাদী?’— বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে তুমুল বির্তক, হস্তক্ষেপ চান আইনজীবীরা

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে উল্লেখ করায় তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মেদিনীপুরের বীর বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী বলে অভিহিত করায় এবার আইনি পদক্ষেপে নামছেন মেদিনীপুর আদালতের একাধিক আইনজীবী।

তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে, এবং প্রয়োজনে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হবে। আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকতের নেতৃত্বে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ঘটনাটি কোনও অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়, বরং ইতিহাস বিকৃতির স্পষ্ট ইঙ্গিত।

প্রশ্নপত্রের ১২ নম্বর প্রশ্নে লেখা ছিল—“মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?”
এই শব্দচয়ন নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। শিক্ষানুরাগী সংগঠন, ঐক্য মঞ্চ এবং বহু নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দের মাধ্যমে বিপ্লবীদের অপমান করা হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, এটি ইংরেজি থেকে অনুবাদের সময় ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুল। তবে সমালোচনা থামেনি।

ঘটনাটিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনীতির পারদ চড়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন,“বিপ্লবী বিপল দাশগুপ্ত, প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য, শুভ্রাংশু পালের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলার দৃষ্টতা মেনে নেওয়া যায় না। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই জবাবদিহি করতে হবে।”

তিনি উপাচার্যকে শোকজ করার দাবি তোলেন এবং বলেন, শিক্ষা দফতর তো মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে।জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি ড. শঙ্কর গুচ্ছাইত মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে আলাদা ইমেল পাঠিয়ে ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর অভিযোগ,“এটা নিছক অনুবাদের ভুল নয়, বরং আগামী প্রজন্মের কাছে বিপ্লবীদের অপমান করার চেষ্টা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিযোগ অস্বীকার না করেই বলেন,“এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। ইংরেজি থেকে অনুবাদের সময় অসতর্কতা থেকেই এই শব্দ এসেছে।”তবে শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করছেন, এই ঘটনায় দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্নপত্র তৈরিতে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা ঘিরে বিতর্ক শুধু শিক্ষা-প্রশাসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা এখন আদালত পর্যন্ত গড়াতে চলেছে। আইনজীবীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— বিচার না মিললে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন রাজনীতিক এবং সমাজকর্মীরাও।