খেজুরিতে জোড়া মৃত্যু ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য! বিজপির দাবি ‘কুপিয়ে খুন’, পুলিশ বলছে অন্য কিছু…!

পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রাম। উৎসবের রাত ছিল, কিন্তু সেই রাতই যেন গ্রাস করে নিল এক ভয়াল পরিণতি। গভীর রাতে এক অনুষ্ঠান চলাকালীন আকস্মিকভাবে লুটিয়ে পড়লেন দু’জন – ২২ বছরের সুজিত দাস এবং ৬৬ বছরের সুধীর পাইক। তাঁদের মৃত্যু ঘিরে এখন শুধু ভাঙনমারি নয়, উত্তাল গোটা খেজুরি। প্রশ্ন একটাই, এ কি নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি নেপথ্যে রয়েছে আরও অন্ধকার কোনও কারণ?

পুলিশের প্রাথমিক দাবি, অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত একটি হ্যালোজেন লাইট আকস্মিকভাবে খুলে পড়ে, আর তাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই নিরীহ মানুষের। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ গেরুয়া শিবির। বিজেপির স্পষ্ট অভিযোগ, এই দুই ব্যক্তিকে ‘কুপিয়ে খুন’ করা হয়েছে। তাঁদের এই অভিযোগ সাধারণ মানুষের মনেও জন্ম দিয়েছে এক গভীর সংশয়।

শোক থেকে ক্ষোভ: খেজুরি থানায় জনতার বাঁধভাঙা ভিড়
মৃত্যুর খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তে পাল্টে যায় খেজুরির চিত্র। শোকের আবহ পরিণত হয় তীব্র ক্ষোভে। সকাল থেকে খেজুরি থানায় কাতারে কাতারে মানুষ জমায়েত হতে শুরু করেন। তাঁদের চোখ-মুখে অবিশ্বাস আর বিচার চাওয়ার আর্তি। মুহূর্তের মধ্যেই সেই জমায়েত পরিণত হয় এক স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে। স্লোগান আর শোরগোলে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করতে হয় বিশাল সংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী।

রহস্যের সুতোয় টানাপোড়েন: বিদ্যুতের আঘাত নাকি ধারালো অস্ত্রের কোপ?
পুলিশ যদিও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার তত্ত্বকে সামনে এনেছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টই চূড়ান্ত সত্য উন্মোচন করবে বলে তারা আশাবাদী। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, যদি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়, তাহলে কেন বিজেপির মতো একটি প্রধান রাজনৈতিক দল ‘কুপিয়ে খুন’-এর মতো গুরুতর অভিযোগ তুলছে?

ইতিমধ্যে এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ন্যায্য তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন, যা এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভাঙনমারির রাতের সেই অন্ধকারে ঠিক কী ঘটেছিল? একটি উৎসবের আলোকসজ্জা কি সত্যিই ঘাতক হয়ে উঠেছিল, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও বীভৎস কোনও সত্য? জনতা এখন সেই রহস্যের জট খোলার অপেক্ষায়। এই ঘটনা খেজুরি এবং তার আশেপাশে এক গভীর অস্বস্তি আর চাপা উত্তেজনা তৈরি করেছে, যা আগামী দিনে আরও কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।