বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের উত্তরাধিকার নির্ধারণের চূড়ান্ত পর্ব আজ, বুধবার। আজই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলের রাজ্য সভাপতি পদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া, যা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা চলছে। দিলীপ ঘোষের পর সুকান্ত মজুমদারের সভাপতি পদে আসীন হওয়া যেমন চমকপ্রদ ছিল, এবারও কি সেই ধারার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, এই প্রশ্নই এখন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিজেপি সূত্রে খবর, আজ দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সল্টলেকের রাজ্য দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারিত হয়েছে। বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলবে স্ক্রুটিনি পর্ব। এরপর সন্ধ্যা ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদপ্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে রাজ্য নেতৃত্ব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির অভ্যন্তরীণ রীতি অনুযায়ী, সাধারণত রাজ্য সভাপতি পদের জন্য একক প্রার্থীই মনোনয়নপর্বে অংশ নেন। অতীতে রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ এবং সুকান্ত মজুমদার – সকলের ক্ষেত্রেই ভোটাভুটি ছাড়াই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার সেই দীর্ঘদিনের প্রথার ব্যতিক্রম হয় কিনা, সেটাই সবচেয়ে বড় কৌতূহলের বিষয়। যদি একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন, তাহলে আগামীকাল ভোটগ্রহণ হবে। অন্যথায়, আজই সন্ধ্যার মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে পরবর্তী রাজ্য সভাপতির নাম।

যদি একাধিক প্রার্থী থাকেন, তাহলে আগামীকাল, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রদেশ পরিষদের মোট ২৯৪ জন প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, যেখানে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে একজন করে প্রতিনিধি মনোনীত হয়েছেন। ভোটগ্রহণের পর দ্রুত ফলাফল ঘোষণার কথা রয়েছে। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে আগামীকাল দুপুর ১টা ৩০ মিনিট নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে।

বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী পদে রয়েছেন এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি অনুযায়ী, তাঁকে হয়তো রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে হতে পারে, যা নতুন নেতৃত্বের জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই পদে পরিবর্তনের আলোচনা চলছিল।

নতুন সভাপতির দৌড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ এবং বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর নাম। সম্প্রতি দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে তাঁর বৈঠক জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও শমীক নিজে জানিয়েছেন, তিনি একটি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতেই দিল্লি গিয়েছিলেন, তবে রাজ্য বিজেপির একাংশের দাবি, এই বৈঠক থেকেই আগামী সভাপতির স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

দলীয় সূত্রের খবর, শমীক ভট্টাচার্য ছাড়াও আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতার নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাকে রাজ্য নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব দেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাজ্য বিজেপির একজন প্রবীণ নেতা বলেছেন, “আজ একাধিক নাম থাকলে ভোটাভুটি হবে। না থাকলে আজই নাম চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”

আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিঃসন্দেহে রাজ্য বিজেপির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হতে চলেছে। কে হবেন সুকান্তের উত্তরসূরি এবং বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী কান্ডারি— তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক মহল।