বিশেষ: ভুলেও মদ-মাংস খাবেন না এই ৪ মাস! চতুর্মাসে ঘনিয়ে আসবে মহাবিপদ, জেনেনিন কেন?

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চতুর্মাস’ শুরু হচ্ছে আগামী ৬ই জুলাই, শনিবার। এই বিশেষ ৪ মাস ধরে চলে নানা ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ব্রত পালন এবং ভজন-কীর্তন। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের দেবশয়নী একাদশী থেকে শুরু হয়ে কার্তিক মাসের দেবউঠনী একাদশীতে এর সমাপ্তি ঘটে। এই বছর চতুর্মাস শেষ হবে ১লা নভেম্বর।

চতুর্মাসের তাৎপর্য ও বিশ্বাস:

সনাতন ধর্ম অনুসারে, এই চার মাসকে অত্যন্ত পবিত্র এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি বছর দেবশয়নী একাদশী তিথি থেকে শ্রীহরি অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণু চার মাসের জন্য গভীর নিদ্রায় যান। এই সময়কালে দেব-দেবীগণ যোগ নিদ্রায় যান বলে মনে করা হয়। যেহেতু স্বয়ং শ্রীহরি যোগনিদ্রায় থাকেন, তাই এই চার মাসে বিয়ে, বাগদান, উপনয়ন, গৃহপ্রবেশের মতো যেকোনো মাঙ্গলিক ও শুভ কাজ করা অশুভ বলে বিবেচিত হয়। মনে করা হয়, এই সময়ে সম্পাদিত শুভ কাজে বাধা আসতে পারে বা তা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।

এই সময়ে কী কী করবেন না?

  • শুভ কাজ: বিবাহ, বাগদান, উপনয়ন, গৃহপ্রবেশ, নতুন ব্যবসা শুরু করা বা যেকোনো নতুন শুভ উদ্যোগ নেওয়া এই ৪ মাসে এড়িয়ে চলা উচিত।
  • খাদ্যাভ্যাস: ধর্মীয় নির্দেশিকা অনুসারে, এই সময়ে কিছু নির্দিষ্ট খাবার বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সবুজ সবজি (বিশেষত বেগুন), ডাল, দই, দুধ, পেঁয়াজ-রসুন, মাংস এবং মদ। এই সময়টিকে সাধারণত সাত্ত্বিক জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করা হয়।
  • অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা: চতুর্মাসে চুল-দাড়ি কাটানো উচিত নয় বলে মনে করা হয়। একইসাথে, তামার পাত্রে খাবার খাওয়াও এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে।

চতুর্মাসে কী কী করা উচিত?

যদিও মাঙ্গলিক কাজ বন্ধ থাকে, চতুর্মাস ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চর্চার জন্য অত্যন্ত শুভ সময়। এই সময়ে নিম্নলিখিত কাজগুলি পালন করা অত্যন্ত লাভজনক বলে মনে করা হয়:

  • পূজোপাঠ ও ব্রত পালন: এই চার মাসকে ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান শিবের উপাসনার জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত পূজোপাঠ, ব্রত পালন এবং ধার্মিক কাজ করা উচিত।
  • মন্ত্র জপ ও পাঠ: কথিত আছে যে, এই সময়ে বিষ্ণু সহস্রনাম এবং শিব চালিশা পাঠ করলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি আসে এবং ভগবান বিষ্ণু ও শিবের বিশেষ কৃপা লাভ হয়।
  • অশ্বত্থ গাছ রোপণ: এই সময়ের মধ্যে বাড়িতে অশ্বত্থ গাছ লাগানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এতে শ্রীহরির কৃপা সর্বদা বজায় থাকে।
  • অন্যান্য দেব-দেবী: ভগবান বিষ্ণুর পাশাপাশি মা লক্ষ্মী, মাতা পার্বতী এবং ভগবান গণেশের পুজো করাও এই সময়ে শুভ ফলদায়ক।

চতুর্মাস কেবল নিষেধাজ্ঞার সময় নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। তাই ভক্তরা এই সময়টিকে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে নিজেদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন।