“I Love You বলা মানেই যৌন অভিপ্রায় নয়”-হাইকোর্টে বেকসুর খালাস পেলেন অভিযুক্ত যুবক

নাবালিকার হাত ধরে ‘আই লাভ ইউ’ বলায় যৌন অভিপ্রায়ের দায় থেকে খালাস পেলেন এক যুবক। ২০১৫ সালের একটি মামলায় ২৫ বছর বয়সী ওই যুবককে যৌন অভিপ্রায়ে ‘আই লাভ ইউ’ বলার অভিযোগে নাগপুর দায়রা আদালত তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। বম্বে হাইকোর্ট সেই শাস্তি বাতিল করে একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে, যা পকসো (POCSO) আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ঘটনাটি ২০১৫ সালের ২৩শে অক্টোবর। সে সময় ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী স্কুল বাস থেকে নেমে তার খুড়তুতো ভাইয়ের সাথে বাড়ি ফিরছিল। অভিযোগকারী নাবালিকা জানায়, দুপুর ১টা নাগাদ এই যুবক বাইক নিয়ে এসে তাকে থামিয়ে দেয়। যুবক তার হাত ধরে বলে যে, যতক্ষণ না সে তার নাম বলবে, ততক্ষণ সে তাকে যেতে দেবে না। এরপরই সে ‘আই লাভ ইউ’ বলে প্রস্তাব দেয়। নাবালিকা ছাত্রী কোনোমতে হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায় এবং বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়। এর প্রেক্ষিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি (IPC) এবং যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (POCSO) আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। আদালতে নাবালিকা, তার বন্ধু এবং বাবা-সহ মোট পাঁচজন সাক্ষীকে হাজির করা হয়েছিল।
নাগপুর দায়রা আদালত এই ঘটনাকে যৌন অভিপ্রায় হিসেবে গণ্য করে যুবককে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। অভিযুক্তের আইনজীবী সোনালী খোবরাগাড়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে আপিল করেন। তিনি যুক্তি দেন যে, যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য এটি প্রমাণ করা অপরিহার্য যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি “যৌন অভিপ্রায়ে” “চাহিদা” বা “অনুরোধ” সহকারে যৌন অনুগ্রহের জন্য শারীরিক যোগাযোগ করেছিলেন অথবা “যৌনতার রঙ মাখানো মন্তব্য করেছিলেন”, যা বর্তমান মামলায় অনুপস্থিত।
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি উর্মিলা জোশী ফালকের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে, “যদি কেউ বলে যে সে অন্য ব্যক্তির প্রেমে পড়েছে বা তার অনুভূতি প্রকাশ করে, তাহলে তা যৌন অভিপ্রায় দেখানো হিসেবে গণ্য হবে না।”
বেঞ্চ আরও স্পষ্টভাবে জানায়, “আই লাভ ইউ” শব্দটি আইনসভার বিবেচনা অনুযায়ী “যৌন অভিপ্রায়” হিসেবে বিবেচিত হবে না। আরও কিছু বলে থাকলে তার উদ্দেশ্য হত যৌনতার দিকে ঠেলে দেওয়া।” আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে, অভিযুক্তের মানসিক অবস্থা দেখা প্রয়োজন, যা প্রমাণ করবে যুবকের আসল উদ্দেশ্য ছিল ভুক্তভোগীর সঙ্গে যৌন যোগাযোগ স্থাপন করা।
বেঞ্চ জানায়, পকসো আইনের অধীনে অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে “যৌন অভিপ্রায়ে” ভুক্তভোগীর গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছেন বা যার মধ্যে শারীরিক যোগাযোগ জড়িত বলে কোনো অভিযোগ নেই। বেঞ্চ এও বলেছে, “যৌনাঙ্গের অনুপ্রবেশ ছাড়া যৌন নির্যাতন যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে প্রসিকিউশন দ্বারা প্রমাণিত হয়নি।” ট্রায়াল কোর্টের বিচারক পকসো আইনের অধীনে প্রদত্ত “যৌন নির্যাতন” এর সংজ্ঞা এবং শাস্তি সঠিকভাবে বিবেচনা না করেই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন, যা ভুল।
এই রায় সমাজে ‘যৌন অভিপ্রায়’ এবং ‘প্রেমের প্রস্তাব’-এর মধ্যেকার সূক্ষ্ম পার্থক্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। পকসো আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং বিচার ব্যবস্থার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ নিয়ে এই রায় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।