কসবা গণধর্ষণ মামলা! আইনজীবীর বিস্ফোরক দাবি, ‘ঘাড়ে লাভ বাইট কী করে এল?’

কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের (Manojit Mishra) আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় যে বিস্ফোরক দাবি করেছেন, তাতে মামলার মোড় নতুন দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি শুধু তাঁর মক্কেলের নির্দোষ দাবি করেননি, বরং সরাসরি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন এবং ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, “আমার মক্কেল মনোজিৎ মিশ্রকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা।” তাঁর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর প্রশ্নটি ছিল, “যদি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে অভিযুক্তের ঘাড়ে লাভ বাইট কী করে থাকতে পারে?” এই প্রশ্নটি মামলার গতিপ্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ফরেনসিক তদন্তের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গঙ্গোপাধ্যায় আরও যোগ করেন, “আমার মক্কেল কোনও অপরাধ করেনি। তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে। বিষয়টি এখন বিচারাধীন, তাই এই মুহূর্তে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সময় এলে সত্য প্রকাশ্যে আসবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমার মক্কেল ধর্ষণ করছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়। সিসিটিভিতে যে অপহরণের কথা বলা হচ্ছে তাও ঠিক নয়।”
এই বিস্ফোরক দাবির বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে নির্যাতিতা ছাত্রীর অভিযোগ। তিনি পুলিশকে জানান, গত ২৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে কলেজের গার্ডস রুমে তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগকারিণী শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী। তাঁর দাবি, কলেজের এক প্রভাবশালী প্রাক্তন ছাত্রনেতার প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই অপরাধে অভিযুক্তকে আরও দু’জন সহায়তা করেছে বলেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ রবিবার তিন অভিযুক্তের বাড়িতেই অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা সংগ্রহ করে। এক তদন্তকারী আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মনোজিতের বাড়িতে ঘটনার সময় পরা পোশাকগুলো পাওয়া গেছে এবং সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।
এই মামলার তদন্তের জন্য কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষালের নেতৃত্বে প্রথমে পাঁচ সদস্যের সিট (Special Investigation Team) গঠন করা হয়েছিল, যা রবিবার বাড়িয়ে ৯ সদস্যের করা হয়েছে।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কসবার আইন কলেজ কর্তৃপক্ষও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত তিন জনকেই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মনোজিৎ মিশ্র, যিনি এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং অস্থায়ী কর্মী ছিলেন, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, কলেজের বর্তমান পড়ুয়া প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জইব আহমেদকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন, “বাংলায় কোনও মেয়ে নিরাপদ নয়!” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
আইনজীবীর নতুন দাবি এবং পুলিশের তদন্তের অগ্রগতি – এই দুইয়ের মধ্যে এখন কসবা মামলার ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। মামলার প্রতিটি মোড়ই এখন সমাজের পাশাপাশি আদালতের নজর কেড়ে নিচ্ছে।