পর্ন সাইটে প্রবেশ লাগবে সরকারি আইডি, জেনেনিন কোথায় চালু হলো এই আইন?

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি টেক্সাসের একটি বিতর্কিত আইনকে বৈধতা দিয়েছে, যার ফলে এখন থেকে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রবেশ করতে হলে ব্যবহারকারীদের সরকারি পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিজেদের বয়স প্রমাণ করতে হবে। এই রায় ডিজিটাল দুনিয়ায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

টেক্সাসের নতুন এই আইন অনুযায়ী, রাজ্যে পর্ন সাইট ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি আইডি অথবা ফেস স্ক্যানের মাধ্যমে বয়স যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে কোনোভাবেই এই ধরনের সাইটে প্রবেশ করা যাবে না। এর আগে, ২০২৩ সালে পর্নহাব-সহ বেশ কিছু সাইট এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল, যুক্তি হিসেবে তারা বলেছিল যে, এটি প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং এই ধরনের কনটেন্ট দেখতে চাওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য অযথা ঝামেলা তৈরি করছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়: ৬-৩ ভোটে আইনের পক্ষে সিদ্ধান্ত

গত শুক্রবার প্রকাশিত সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে ৬ জন বিচারপতি আইনের পক্ষে এবং ৩ জন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিচারপতি ক্ল্যারেন্স টমাস এই মামলার রায় লিখেছেন। তিনি তার রায়ে বলেছেন, “টেক্সাসের মতো রাজ্যগুলি অশ্লীল বা স্পষ্ট যৌন কনটেন্টে শিশুদের প্রবেশ ঠেকাতে বয়স যাচাইয়ের নিয়ম বাধ্যতামূলক করতে পারে এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বৈধ।”

এই বছরের জানুয়ারিতে দুই ঘণ্টার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা অপ্রাপ্তবয়স্কদের রক্ষায় কিছু সুরক্ষাব্যবস্থা থাকার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে একইসঙ্গে, তারা এই আইন যেন প্রাপ্তবয়স্কদের মত প্রকাশের অধিকার বা স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত না করে, সে বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন: পর্ন সাইটগুলির যুক্তি

পর্ন ওয়েবসাইটগুলির আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতে ২০০৪ সালের এক সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করেছেন। সেই রায়ে বলা হয়েছিল যে, ইন্টারনেটে এমন কনটেন্টকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না, যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের দেখার অধিকার রয়েছে। তাদের যুক্তি ছিল, শিশুদের রক্ষার কথা বলে আইন করলেও এতে বড়দের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা আদালতের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের সঙ্গে মেলে না।

তারা আরও যুক্তি দিয়েছেন যে, ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচয়পত্র বা ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া অনেক প্রাপ্তবয়স্ককেই এই ওয়েবসাইটগুলিতে প্রবেশ থেকে বিরত রাখতে পারে। এতে প্রাপ্তবয়স্করা ভয় বা অস্বস্তিতে পড়ে এই ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে পারেন, যা তাদের প্রথম সংশোধনী বা সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন। প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্র শিল্প তাদের আইনি নথিতে জানিয়েছে, যখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তার সরকারি পরিচয়পত্র অনলাইনে জমা দেন, তখন তার ব্যক্তিগত তথ্য ভুলক্রমে ফাঁস হওয়া বা হ্যাকারদের হাতে পড়ার ঝুঁকি থাকে। সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই আইন ভবিষ্যতে কেবল পর্নোগ্রাফি নয়, বরং অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেও ব্যবহৃত হতে পারে।

শিশুদের সুরক্ষা: টেক্সাসের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি

অন্যদিকে, টেক্সাসের আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতে ১৯৬৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ওপর নির্ভর করেছেন। সেই রায়ে আদালত নিউ ইয়র্কের এমন একটি আইনকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিন বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। টেক্সাসের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন যে, “আগে যেভাবে নিউ ইয়র্কে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ম্যাগাজিন বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, অনলাইনের ক্ষেত্রে একই ধরনের বিষয় নিয়ন্ত্রণ করাটাও বৈধ। কনটেন্ট যেখানেই থাকুক, শিশুদের সুরক্ষার জন্য নিয়ম থাকা প্রয়োজন।”

এই রায়ের পর টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “শিশু, অভিভাবক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের জন্য এটি এক বড় জয়, যা অনলাইন পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষা দেবে।”

এই রায় ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত অধিকার ও শিশু সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।