আবারও র্যাগিংয়ের ভূত! ইউজিসি’র নির্দেশে বহরমপুর কলেজে ৫ ছাত্র বহিষ্কার, যাদবপুরের রেশ না কাটতেই নতুন বিতর্ক

রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ যেন থামছেই না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্মান্তিক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বহরমপুর কলেজে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল, যেখানে ইউজিসির (UGC) সরাসরি নির্দেশে পাঁচজন ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আবারও কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র সুরক্ষার বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠেছে।
ইউজিসির হস্তক্ষেপ: পাঁচ ছাত্র বহিষ্কৃত
জানা গিয়েছে, বহরমপুর কলেজের প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থী সরাসরি ইউজিসি’র অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানান। তাদের দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা ইউজিসির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (২৮শে জুন, ২০২৫) ইউজিসি থেকে বহরমপুর কলেজ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসে। সেই নির্দেশ মেনে আজ, রবিবার (২৯শে জুন, ২০২৫) কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত পাঁচজন দ্বিতীয় বর্ষের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
কলেজের অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডল জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পাঁচ অভিযুক্ত দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাদের হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে কলেজ থেকে সম্পূর্ণ বহিষ্কার না করে তাদের নিজেদের শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অধ্যক্ষ জানান।
কলেজ কর্তৃপক্ষের গড়িমসি? শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
যদিও অধ্যক্ষের দাবি, ইউজিসিকে মেইল করার আগে অভিযোগকারী দুই ছাত্র তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারতেন, তাহলে আরও আগেই ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু অভিযোগকারী দুই ছাত্রের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ আগেও এই বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি এবং বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পারে মনে করেই তারা সরাসরি ইউজিসিকে মেইল করেন। এই বিষয়ে অবশ্য কলেজের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।
রাজ্যে র্যাগিংয়ের পুনরাবৃত্তি: উদ্বেগে শিক্ষামহল
রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নতুন নয়। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে এক ছাত্রের প্রাণ হারানোর ঘটনা রাজ্যজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। সেই ঘটনার পর ইউজিসি সকল কলেজকে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি গঠন করে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু বহরমপুর কলেজের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, র্যাগিংয়ের মতো অমানবিক প্রথা এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
বহরমপুর কলেজের হোস্টেলে র্যাগিংয়ের কথা আগেও শোনা গিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, র্যাগিং হলেও এতদিন কেউ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আনতে সাহস পাননি। সিনিয়রদের ভয়-সহ নানা কারণে অনেকেই মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এবার প্রথম বর্ষের এই দুই শিক্ষার্থী রুখে দাঁড়ানোয় বিষয়টি প্রকাশ্যে এল।
মাসখানেক আগেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং নিয়ে বিতর্ক হয়, যখন ওবিসি-আন্দোলন চলাকালীন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকস্তরের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে র্যাগিং ও হেনস্তার অভিযোগ ওঠে। ওই ছাত্রের দাবি, তাঁর বিভাগের দুই গবেষক শিক্ষার্থী তাঁকে হেনস্তা করেছেন এবং থাপ্পড়ও মেরেছেন। এছাড়াও আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃত্যুর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘থ্রেট কালচার’-এর বিষয়টি আরও একবার প্রকাশ্যে আসে।
এই প্রেক্ষাপটে বহরমপুর কলেজের ঘটনা আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা এবং র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরল। ইউজিসির নির্দেশ মেনে কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ এক ইতিবাচক বার্তা দিলেও, র্যাগিংয়ের মূল থেকে নির্মূল করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে।