“ল’কলেজে ‘দাদাগিরি’ চালাত ‘ম্যাঙ্গো’!”-পুলিশের খাতায় আগেও নাম উঠেছিল অভিযুক্ত মনোজিতের

আরজি করের ভয়ঙ্কর স্মৃতি উস্কে দিয়ে ফের ধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল বাংলা। এবার ঘটনাস্থল সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজ। এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে কলেজেরই এক প্রাক্তন ছাত্র ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী মনোজিৎ মিশ্র-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা আবারও শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীদের আস্ফালন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, যিনি কলেজে ‘টিম এমএম’ এবং ‘মনোজিৎ দাদা তুমি আমাদের হৃদয়ে আছ’ লেখা দেওয়াল লিখন দিয়ে নিজের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন, পুলিশের খাতায় একজন ‘হিস্ট্রি-শিটার’ হিসেবেই পরিচিত। জানা গেছে, এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (TMCP)-এর সঙ্গে যুক্ত মনোজিৎ কলেজের ভর্তি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন নির্বাচন, এমনকি শিক্ষকদের ক্লাস রুটিন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ। ‘ম্যাঙ্গো’ নামে পরিচিত এই ছাত্রনেতার দাপটে কলেজ কর্মী থেকে অধ্যক্ষ পর্যন্ত সকলেই নাকি তটস্থ থাকতেন।

কলেজ পড়ুয়াদের সূত্রে জানা গেছে, মনোজিৎ মিশ্রের কালীঘাট মন্দির চত্বরেও যথেষ্ট প্রভাব ছিল। ২০১২ সালে কলেজে প্রথম ভর্তি হওয়ার এক বছরের মধ্যেই ছুরি মারার অভিযোগে তার নাম জড়ায়। ২০১৪ সালে তাকে ডিসকলেজিয়েট করা হলেও, ২০১৭ সালে সে আবার সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে ভর্তি হয় এবং সিসিটিভি ভাঙচুর-সহ একাধিক ঘটনায় তার নাম আসে। এমনকি, কলেজের প্রয়াত প্রিন্সিপাল দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। ২০২১ সালে পাশ করলেও সে কলেজ ছেড়ে যায়নি এবং একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করছিল। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে ছবি দেখিয়ে সে জুনিয়রদের প্রভাবিত করত বলেও অভিযোগ।

এই ভয়াবহ ঘটনার পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, “২০১৯ সালে মনোজিৎকে একটি নিম্ন পদ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পক্ষে জ্যোতিষবিদ্যা জানা সম্ভব ছিল না যে ২০২৫ সালে সে এমন কিছু করবে।” তৃণমূল নেত্রী শশী পাঁজা “কোনো বাঁদরামি সহ্য করা হবে না” বলে মন্তব্য করেছেন এবং কুণাল ঘোষ ‘মেরে পিঠের চামড়া গুটিয়ে নেওয়ার’ কথা বলেছেন। তবে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, ২০১২-১৩ সাল থেকে মনোজিতের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগ কি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অজানা ছিল? এই ঘটনা আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব এবং তার কুপ্রভাবের দিকে আঙুল তুলেছে।