কালীগঞ্জ কাণ্ডে হুমায়ুন কবীরের ‘একলা চলো’ নীতি, তৃণমূলের শোকজ, বিধায়ক বিড়ম্বনায়

নদীয়ার কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামে বোমার আঘাতে নিহত বালিকা তামান্না খাতুনের বাড়িতে ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ব্যক্তিগত সফর এবং আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব ঘিরে দলের অন্দরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কিছু না জানিয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়ায় হুমায়ুনকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তামান্নার মায়ের আর্থিক সাহায্য প্রত্যাখ্যানের ঘটনায় বিধায়ককে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়, যা দলের কড়া পদক্ষেপের অন্যতম কারণ।
‘অননুমোদিত’ সফর এবং আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব
বুধবার কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামে তামান্নার বাড়িতে গিয়েছিলেন ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেখানে তিনি শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি কিছু আর্থিক সাহায্য দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তামান্নার মা সাবিনা বিবি জোরালো কণ্ঠে সেই আর্থিক সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন, যা প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ুন কবীরের এই সফর এবং আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাবের বিষয়ে দলের কোনো পূর্ব অনুমতি ছিল না। বিধায়ক দলকে কিছু না জানিয়েই ‘আগ বাড়িয়ে’ এই কাজ করেন। এই ঘটনাকে দল ভালোভাবে নিচ্ছে না এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।
দলের শোকজ নোটিশ: ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাবদিহি
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন যে, হুমায়ুন কবীরকে এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। দলের অনুমতি ছাড়া এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ গুরুতর বলে মনে করা হচ্ছে।
হুমায়ুনের সাফাই: ‘এনজিও-র পক্ষ থেকে’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি একটি এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত এবং সেই এনজিও-র পক্ষ থেকেই তামান্নার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। এই বিষয়ে তিনি দলকে কিছু জানাননি বলেও স্বীকার করেন। তবে, তিনি এখনো দলের কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাননি বলে দাবি করেছেন। হুমায়ুন জানান, তিনি দলের পক্ষ থেকে চিঠি পেলে অবশ্যই তার জবাব দেবেন।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে জোরদার চর্চা চলছে। একদিকে যেমন তামান্নার মৃত্যু নিয়ে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ রয়েছে, তেমনি দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তৃণমূলের এই কঠোর পদক্ষেপও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, হুমায়ুন কবীরের জবাব কী হয় এবং এই ঘটনা দলের অন্দরে আর কী প্রভাব ফেলে।