‘পরমাণু যুদ্ধ থামিয়েছি’, ভারত-পাক নিয়ে বার বার একই কথা বলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘পরমাণু যুদ্ধ’ থামিয়েছেন তিনিই— আবারও এই বিস্ফোরক দাবি করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে সাংবাদিকদের সামনে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের এই নতুন করে করা দাবি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কের ঢেউ থামছেই না।
ঠিক কী বলেছেন ট্রাম্প? সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত। একাধিক ফোন কলের মাধ্যমে আমি তা থামিয়েছি। আমি বলেছিলাম, ‘তোমরা যদি নিজেদের মধ্যে সংঘাত চালিয়ে যাও, তাহলে আমরা বাণিজ্য চুক্তি করব না।’ জেনারেল (আসিম মুনির) দারুণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমার দারুণ বন্ধু। তাঁরা বলেছিলেন, ‘আমরা বাণিজ্য চুক্তি চাই।’ এভাবেই আমরা পরমাণু যুদ্ধ থামিয়েছি।”
উল্লেখ্য, কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। ভারতের এই কঠোর প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের অনুরোধেই ভারত যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটে। যদিও যুদ্ধবিরতির খবরটি প্রথম ট্রাম্পই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, যা নিয়ে তখনই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে ট্রাম্প বহুবার দাবি করেছেন যে, তিনিই ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষ থামাতে মধ্যস্থতা করেছেন।
তবে, ভারত প্রথম থেকেই ট্রাম্পের এই দাবি দৃঢ়ভাবে খারিজ করে দিয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে, এই সংঘর্ষবিরতিতে আমেরিকার কোনো ভূমিকা ছিল না। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প তার দাবিতে অনড় রইলেন।
অন্যদিকে, ইসলামাবাদ অবশ্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতিতে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ এবং তার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকারের তরফে বলা হয়েছে যে, যদি ট্রাম্প হস্তক্ষেপ না করতেন, তাহলে দুই দেশের মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। পাকিস্তান আরও দাবি করেছে, “একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে যোগাযোগ করে ট্রাম্প দুর্দান্ত কৌশলগত দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টার ফলেই সংঘর্ষবিরতি হয়েছে বলে পাকিস্তান উল্লেখ করেছে এবং এজন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতও করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর পরও আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না। আমি নোবেল পুরস্কার পাব না, সে আমি যা-ই করি না কেন।”
ট্রাম্পের এই লাগাতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।